মাগুরার বহুল আলোচিত ও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ‘মঘির ডাল ছয় খুন’ মামলায় হাজিরা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা হাজিরা দেন।
হাজিরা দিতে আসেন মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান।
বিএনপি নেতাদের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে নেতাকর্মীদের চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি দেখা যায়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে শতাধিক নেতাকর্মী আদালতের আশপাশে জড়ো হন। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও তাদের উপস্থিতি আদালত চত্বরে আলাদা মাত্রা যোগ করে।
বিএনপির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে, মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দায়ের করা হয়েছে।
হাজিরা শেষে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, “এই মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই এ নাটক সাজানো হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, “সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। কিন্তু গণতন্ত্রের লড়াই থেকে আমরা একচুলও সরবো না।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, “এই মামলা একটি নগ্ন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যারা এতে জড়িত বলা হচ্ছে, তারা বিএনপির মাঠের পরীক্ষিত কর্মী। সরকার বিচার ব্যবস্থাকে প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে—এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, “এই মামলায় এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রমাণ উপস্থাপনের দিক থেকে রাষ্ট্রপক্ষ এখনো দুর্বল।”
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের এই সম্মিলিত হাজিরা শুধুমাত্র একটি মামলার প্রেক্ষাপটে আদালতে যাওয়া নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণ ও মাঠের প্রস্তুতির ইঙ্গিতও বহন করে। মামলাটি ঘিরে এর আগেও একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মঘিরডাল গ্রামে সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডে ছয়জন নিহত হন। মামলার এজাহারে বিএনপি সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম উঠে আসে, যদিও তারা বরাবরই এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে মামলাটি এখন শুধুই একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং এটিকে কেন্দ্র করে রাজপথ, আদালত ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সংযোগও তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইএইচ