পদ্মায় ইলিশ সংকটে পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম

একসময় পদ্মা নদীর ইলিশ ছিল দেশজুড়ে সুখ্যাত। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় সেই ইলিশ আজ যেন হারিয়ে গেছে। নদীতে জাল ফেললেও মাছ নেই।
আর এতে করে চরম দুরবস্থায় পড়েছেন ইলিশনির্ভর অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ জেলে পরিবার। পেশা বদল ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তাঁরা।

বর্ষা মৌসুম শুরুর এই সময়টিতে অন্য বছরগুলোতে পদ্মায় ইলিশের আনাগোনা থাকত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবার নেই সেই ইলিশ। মাঝেমধ্যে দু-একটি ছোট ইলিশ ধরা পড়লেও জেলেরা পড়েন মৎস্য বিভাগের অভিযানের মুখে।

জেলে প্রদীপ হালদার বলেন, সারারাত নদীতে কাটাই, কিন্তু খরচের টাকাটাও উঠে না। আগে যেমন ইলিশ পেতাম, এখন সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে।

কৃষ্ণ হালদার জানান, নদীতে এখন ইলিশ তো দূরের কথা, অন্য মাছও কমে গেছে। অনেক জেলে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

জেলেদের অনেকে মহাজন বা আড়তদারদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন নিয়ে জাল, নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করেন। কিন্তু মাছ না পেয়ে তাঁদের ঋণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে।

স্থানীয় জেলে মো. হিরু শেখ হলদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি সহায়তা প্রকৃত জেলেরা পায় না, পায় মৌসুমি জেলে আর অন্য পেশার মানুষ। প্রশাসনের উচিত প্রকৃত জেলেদের তালিকা তৈরি করে তাদের সহায়তা দেওয়া।

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ইলিশ সাধারণত গভীর পানির মাছ। পদ্মায় এখন বহু ডুবোচর তৈরি হয়েছে, আর নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ইলিশের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পারলে এই অঞ্চলে আবার ইলিশের আগমন বাড়বে।’

গোয়ালন্দের পদ্মার ঘাট এখন আর আগের মতো কোলাহলমুখর নয়। জেলেরা নিরবে বসে থাকেন মাছের অপেক্ষায়, চোখে হতাশা আর অনিশ্চয়তার ছাপ।

তাঁরা চাইছেন সরকার দ্রুত নদী খনন ও প্রকৃত জেলেদের সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নিক—নইলে পদ্মার ইলিশ হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হারিয়ে যাবে জেলেপাড়ার জীবনও।

বিআরইউ