সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মৌজায় জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সদর সাবরেজিস্ট্রার মো. জাহিদ হাসান ঘুষের বিনিময়ে সরকারের ঘোষিত মৌজায় অবৈধভাবে দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা নিয়েও।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর চর ভবানীপুর মৌজার ১৮০২৩ ও ১৮০২৪ নং দলিলের মাধ্যমে মো. দুলাল মিয়া ও ফারুক হোসেনের নামে জমি বিক্রি করেন সাজিদ আলী। এরপর চলতি বছরের ৩ মার্চ ৩৬৬৯ নম্বর দলিলে চর ভবানীপুর মৌজার ৫৩২৬ ও ৫৩৫২ দাগে ৬২ শতাংশ এবং গোবিন্দপুর মৌজার ১৪৮ ও ২৩৮ দাগে ৬৫ শতাংশ জমি আশরাফুল গংয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
সর্বশেষ ২৩ জুন জেলখানার চর মৌজার ৩৬১০ দাগে মো. কামরুল ইসলামের নামে সাড়ে ৬ শতাংশ জমির দলিল সম্পাদিত হয়। সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. জাহিদ হাসান। অথচ এসব মৌজাই সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে এবং এসব এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জারি করা এক চিঠিতে (স্মারক নম্বর: ০৫.৪৫.৬১০০.০০১.১৪.০০১.১৬-৪৫৬) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘প্ল্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সমুদয় ভূমি একসঙ্গে অধিগ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে জমির ক্রয়-বিক্রয় যাতে বন্ধ থাকে এ বিষয়ে চিঠি ইস্যু করা রয়েছে।
ওই চিঠিতে গোবিন্দপুর, পাড়ালক্ষীর আলগী, চর ভবানীপুর, জেলখানার চর, চর ঈশ্বরদিয়া, দুর্গাপুর, চরসেহড়া ও ময়মনসিংহ টাউন মৌজায় জমি রেজিস্ট্রেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং জেলা রেজিস্ট্রারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নিয়মিত জমি রেজিস্ট্রেশন চলছে। ‘সাবরেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করলেই নিষিদ্ধ জমিও বিক্রি হয়ে যায়,’এমন মন্তব্য করেছেন অনেকে।
অভিযোগ রয়েছে, সাবরেজিস্ট্রার মো. জাহিদ হাসান মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে দালাল চক্র ও নির্দিষ্ট কিছু দলিল লেখকের মাধ্যমে এসব রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। দলিল প্রক্রিয়াগুলো যাতে প্রশাসনের নজরে না পড়ে, সে জন্য গ্রহণ করা হয় ধোঁয়াশাময় কৌশল। এছাড়াও শত শত দলিল রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন অফিসে আসে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টায়।
সাবরেজিস্ট্রার জাহিদ হাসানের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাঘেরকান্দা রহমতপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। ফলে এলাকার প্রভাবশালী মহলের সঙ্গেও তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার বলেন, ২০১৬ সালের নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত চিঠির পরে আর কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। নির্দেশ এখনো বহাল রয়েছে।
তবে বাস্তবতা হলো সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে জমির রেজিস্ট্রেশন, আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন বলেই অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের।
জমি অধিগ্রহণের স্বার্থে ভূমি অধিগ্রহণ ঘোষিত এলাকাগুলোতে এমন অনিয়ন্ত্রিত দলিল সম্পাদনে স্থানীয় প্রশাসনের একটি অংশের নীরব সহযোগিতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা অবিলম্বে-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপসারণ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদ হাসান বলেন, দলিল বন্ধ নেই হচ্ছে সরকারি চিঠির বিষয়ে বললে এড়িয়ে যান, বলেন আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা করেন।
জেলা রেজিস্ট্রার পথিক কুমার সাহা বলেন, সঠিক নিয়মে অফিস পরিচালিত হচ্ছে।
ইএইচ