ভোলার মনপুরা উপজেলার তিন জেলেকে মুক্তিপণের এক লক্ষ টাকা দেওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছে হাতিয়ার জলদস্যু বাহিনী। তিন দিন পর জীবিত ফিরে আসায় জেলে পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
অপহৃত জেলেদের ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাদের আড়তদার মহিউদ্দিন হাওলাদার ও ফোরকান বদ্দার।
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে একটি ট্রলারে করে মনপুরায় ফিরে আসেন অপহৃত তিন জেলে—গিয়াস উদ্দিন মাঝি, মলিন মাঝি ও রাজিব মাঝি।
এদের মধ্যে গিয়াস ও মলিন দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের বাসিন্দা, আর রাজিবের বাড়ি দক্ষিণ সাকুচিয়া গ্রামেই।
পরিবার ও আড়তদার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৬ জুলাই) গভীর রাতে মনপুরা ও হাতিয়ার মাঝামাঝি উড়িচর এলাকায় মাছ শিকার করার সময় একটি ট্রলারে হামলা চালায় হাতিয়ার জলদস্যুদের একটি দল। প্রথমে গিয়াস উদ্দিনের ট্রলারসহ তাকে অপহরণ করা হয়। পরে একই ট্রলার ব্যবহার করে আরও দুটি ট্রলারে হামলা চালিয়ে মলিন ও রাজিব মাঝিকেও ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের চোখ বেঁধে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ এলাকার গহীন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে জলদস্যুরা।
রোববার সকাল থেকেই জলদস্যুরা অপহৃতদের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্য ও আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দুই দিন ধরে দরকষাকষির পর এক লক্ষ টাকায় মুক্তিপণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সোমবার রাতে নগদ ও বিকাশে ওই টাকা হস্তান্তর করা হয়। এরপর মঙ্গলবার গভীর রাতে গহীন বনের একটি স্থানে তিন জেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা ট্রলারে করে মনপুরায় ফেরত আসেন।
অপহৃত গিয়াস উদ্দিন মাঝি বলেন, “আমাদের মারধরের সময় পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিতো, যাতে তারা মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়। টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরে ছেড়ে দেওয়ার সময় আমাদের হাতে একটি ‘টোকেন’ দেয় এবং বলে—এই ঘটনা প্রশাসনকে জানালে আবার ধরে নিয়ে নদীতে ফেলে মেরে ফেলবে।”
কেন কোস্টগার্ড বা পুলিশকে অবহিত করা হয়নি জানতে চাইলে জেলে পরিবার জানায়, “জলদস্যুরা হুমকি দিয়েছিল—প্রশাসনকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলা হবে। তাই সাহস পাইনি।”
তারা আরও জানান, “প্রতি বছরই হাতিয়ার জলদস্যুরা মনপুরার জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে অপহরণ করে। অথচ মেঘনা নদীতে কোস্টগার্ড বা নৌ পুলিশের কোনো কার্যকর টহল নেই। এ কারণেই একের পর এক ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।”
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নিঝুমদ্বীপ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান কবির বলেন, “জেলেদের ফিরে আসার খবর পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে কেউ এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি।”
ইএইচ