টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম

◉ চিকিৎসক-নার্স সংকট 

◉ রোগীদের ভোগান্তি 

◉ স্বজনদের হয়রানি

টাঙ্গাইলের সরকারি দুটি প্রধান হাসপাতালে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) না থাকায় জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও আইসিইউ চালু হয়নি, আর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ কক্ষ প্রস্তুত থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে জনবল সংকটের কারণে।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আজ পর্যন্ত আইসিইউ বিভাগ চালু করা যায়নি। অপরদিকে, জেনারেল হাসপাতালে করোনাকালে স্থাপিত ১০ শয্যার আইসিইউ কিছুদিন চালু ছিল, তবে করোনার প্রভাব কমে যাওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন গুরুতর রোগীদের ঢাকায় নিতে হয়, যা সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে ওঠে। অনেক রোগী সেবা না পেয়ে ঢাকায় নেয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করছেন।

জেলাবাসীর অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালেই যখন আইসিইউ সেবা মেলে না, তখন সাধারণ মানুষের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

চিকিৎসক ও জনবল সংকট প্রকট

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩০০ রোগী ভর্তি হন। অথচ ৫৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১২টি পদ শূন্য রয়েছে। নার্স, প্যারামেডিকস ও অন্যান্য সহায়ক পদেও রয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি— ১৭ জন নার্স, ৩ জন প্যারামেডিকস, ৩ জন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদ খালি।

হাসপাতাল পরিচালনায় এসব সংকট কর্তৃপক্ষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলছে।

জানা গেছে, দুর্ঘটনা বা গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে রোগীদের দ্রুত ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যেমন, সম্প্রতি কালিহাতীর যদুরপাড়া গ্রামের খোকন মিয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হলে এবং নাগরপুরের আনোয়ার হোসেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হলে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।
এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনায় আহতদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

টাঙ্গাইল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মিয়া জানান, প্রতিদিন অন্তত ৭-৮টি অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে ঢাকায় যায়। এ ছাড়া অন্য যানবাহনেও অনেক রোগী গমন করেন।

আইসিইউ চালুর সম্ভাবনা আছে, কিন্তু জনবল নেই

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, আইসিইউ চালুর জন্য অবকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন শুধু পর্যাপ্ত জনবল। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু করতে নিচের জনবল প্রয়োজন— ১ জন অবেদনবিদ, ১ জন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন নার্স, ২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ৩ জন ওয়ার্ডবয়, ২ জন আয়া ও ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল কদ্দুস বলেন, চিকিৎসক সংকট ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় এখানে আইসিইউ চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন রোগী ভর্তি হন এবং আউটডোরে সেবা নেন প্রায় ১ হাজার রোগী। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ১২ জন গুরুতর রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ বলেন, “৪০ লাখ মানুষের জেলায় আইসিইউ সেবা না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। আইসিইউ না থাকায় রোগী ও স্বজনরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত আইসিইউ চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

ইএইচ