হোসেনপুরে স্কুল শিক্ষিকার ঘরে তালা, আশ্রয়হীন মা-ছেলে

রায়হান জামান, কিশোরগঞ্জ প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্কুল শিক্ষক পারভীন আক্তারের বসতঘরে তালা দিয়ে ৮ বছরের শিশু সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মা-ছেলে আশ্রয়হীন হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। 

বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তৈরি হয়েছে। পারভীন আক্তার হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

গত ১৬ আগস্ট পারভীন আক্তার হোসেনপুর থানায় সহোদর ছোট ভাই এস.এম. হৃদয় (২৮) ও চাচা কাঞ্চন মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পারভীন আক্তারের বাবা মো. রুকন উদ্দিনের দুই সন্তান পারভীন ও হৃদয়। পারভীনের স্বামী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট। চাকরির সুবাদে তিনি সেনানিবাসে থাকায় পারভীন ৮ বছরের ছেলে শাইয়ানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছিলেন।

পারভীন আক্তার বাবার কাছ থেকে ৩ শতাংশ ভূমি পেয়ে সেখানে বসতঘর নির্মাণ করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি সহোদর ভাই হৃদয় ও চাচা কাঞ্চন মিয়া তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালান। তারা ঘরের সামনে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করতে চাইলে পারভীন আপত্তি জানান। এর জেরে কাঞ্চন মিয়া অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং হৃদয় শারীরিকভাবে নির্যাতন চালান। পরে ঘরে তালা লাগিয়ে মা-ছেলেকে ঘরের বাইরে বের করে দেওয়া হয় এবং হুমকি দেওয়া হয়, আবার প্রবেশ করলে প্রাণনাশ হবে। এরপর থেকে পারভীন আক্তার ও তার সন্তান আশ্রয়হীন হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগের বিষয়ে জানান, পারভীন নিজের অর্থায়নে বাবার প্রাপ্ত ভূমিতে ঘর নির্মাণ করেছিলেন। তবে ভাইয়ের চাপেই বাবা বাকি সম্পত্তি ছেলের নামে লিখে দেন। এতে পারভীন ও হৃদয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছেন, একজন নারী শিক্ষককে ছোট শিশুসন্তানসহ এভাবে রাস্তায় ফেলা অন্যায় এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে হৃদয় বলেন, “বাবা আমাদের দুজনকেই জমি দিয়েছেন। কিন্তু বোনকে আলাদা কোনো জায়গা দেননি। সে বাবার বাড়িতে থাকতে পারবে না। তার স্বামী আছে, তাই বাড়িই তার ঠিকানা।”

পারভীনের বাবা রুকন উদ্দিন বলেন, “জীবিত থাকতেই জমি ভাগ করেছি। ছেলে একটাই, তাই তাকে বেশি দিয়েছি। মেয়ের অভিযোগে তাকে ঘরে ঢুকতে দেব না।”

হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন জানান, পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব থেকেই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন রুমে তালা লাগানো হলেও, জমি-সম্পর্কিত বিষয়ে পারমিশন ছাড়া পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের দ্রুত ন্যায্য সমাধান ও মা-ছেলের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

ইএইচ