খাগড়াছড়িতে উপজেলা নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে জমছে প্রচারণা

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৪, ১০:৩২ এএম

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ  নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ি জেলার তিন  উপজেলা খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা,পানছড়ি নির্বাচনি শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে প্রতিটি জনপদ । তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

তবে পানছড়িতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই। আঞ্চলিক সংগঠনের দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপির ভোট বর্জন ও আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী না থাকায় ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝে।

বিএনপির ভোট বর্জনের মুখে প্রচণ্ড তাপদাহ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠাতব্য খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থীদের প্রচারণা চলছে।

আগামী ২১ মে অনুষ্ঠাতব্য খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৪১টি। মোট ভোটার ৯২ হাজার ৮৬৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৭ হাজার ৮৯৫ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯৬৯ জন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম (আনারস), সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন (মোটরসাইকেল), গোলাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা (কৈ মাছ) জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুশীল জীবন ত্রিপুরা (টেলিফোন) ও ভারত প্রত্যাগত নেতা সন্তোষিত চাকমা (দোয়াত কলম) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আসাদ উল্লাহ (বই), ক্যাউচিং মারমা (তালা), মো. আবু হানিফ (টিয়াপাখি), মো. এরশাদ হোসেন (চশমা) ও শাহাবুদ্দিন সরকার পেয়েছেন (টিউবওয়েল) প্রতীক।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কল্যাণী ত্রিপুরা (কলস), নিউসা মগ (প্রজাপতি) ও নিপু ত্রিপুরা (ফুটবল) নিয়ে নির্বাচন করছেন।

দিদারুল আলম ৩২ বছরের রাজনীতি ক্যারিয়ারে দুই মেয়াদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে তিনি কাজ করছেন। খাগড়াছড়ি সদর  উপজেলাকে স্মার্ট উপজেলা করার লক্ষ্যে এ বছর নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন  তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি জানান, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলে তিনি জয় লাভ করবেন।নির্বাচিত হলে উপজেলা পরিষদকে সেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে জানান।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ এর বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান আকতার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে  উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই তিনি  খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।তিনি দীর্ঘ ৫বছর উপজেলা পরিষদের ভাইস- চেয়ারম্যান থাকা কালীন সময়ে উপজেলার  প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারের উন্নয়ন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।  আমি দীর্ঘদিন মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছি।নির্বাচনে জনগণ যদি আমাকে নির্বাচিত করে আমি উপজেলার অসমাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করবো। পাশাপাশি নতুন প্রকল্পকের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদকে আধুনিক স্মার্ট উপজেলা পরিষদ হিসেবে গড়ে তুলবো।

গোলাবাড়ী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা (কৈ মাছ) প্রচার চালাচ্ছেন প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায়। তিনি বিগত ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন বাস্তবায়িত উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন।আমাকে নির্বাচিত করে আমি উপজেলার অসমাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করবো।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দুই জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দীঘিনালা উপজেলার ভোট কেন্দ্র ৩৬টি। মোট ভোটার ৯০ হাজার ১৯৪। পুরুষ ভোটার ৪৬ হাজার ৮১ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ১১২ জন। দুর্গম নাড়াইছড়িতে ভোটার সরঞ্জাম যাবে হেলিকপ্টার।

দীঘিনালায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাশেম (আনারস) ও ইউপিডিএফ প্রসীত সমর্থিত প্রার্থী ধর্ম জ্যোতি চাকমা (মোটরসাইকেল)। দুই প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় সরগরম দীঘিনালার প্রত্যন্ত জনপদ। উভয় প্রার্থীই জয়ে আশাবাদী। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও বসে নেই।

দীঘিনালায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোস্তফা কামাল মিন্টু (টিউবওয়েল), সোলাইমান (টিয়াপাখি ) ও সুসময় চাকমা (চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সীমা দেওয়ান (কলসী) ও বিলকিছ বেগম পেয়েছেন (প্রজাপতি) প্রতীক।

পানছড়ি উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়নি। সেখানে দুই আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ প্রসীত ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পানছড়ি উপজেলার ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টিতে শূন্য ভোট ও অপর কেন্দ্রে মাত্র একটি ভোট পড়ে। পানছড়িতে মোট ভোটার ৫৬ হাজার ৫ ভোট। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ হাজার ২৪ ভোট ও নারী ভোটার ২৭ হাজার ৯৮০ ভোট।

পানছড়িতে চেয়ারম্যান পদে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সমর্থিত প্রার্থী মিটন চাকমা (আনারস) ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ইউপিডিএফ প্রসীত সমর্থিত চন্দ দেব চাকমা (কাপ-পিরিচ) নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ সমর্থিত প্রার্থী পানছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালালেও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের প্রচারণা বাজার কেন্দ্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই আঞ্চলিক দলের প্রার্থীর কারণে এ উপজেলার সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনের দিন সংঘাতে আশঙ্কায় আতঙ্কিত। দুই আঞ্চলিক দলের প্রার্থী নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বিএনপির বর্জন ও আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী না থাকায় ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝে।

মিটন চাকমা তিনি নির্বাচিত হলে সহাবস্থান ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবেন। অপরদিকে চন্দ্র দেব চাকমা বলেন, অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনিই নির্বাচিত হবে।

পানছড়িতে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে লোকমান হোসেন (বৈদ্যুতিক বাল্ব), জয়নাথ দেব (তালা), সৈকত চাকমা (টিউবওয়েল) ও কিরণ ত্রিপুরা পেয়েছেন (চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনিতা ত্রিপুরা ফুটবল) ও সুজাতা চাকমা (কলস) প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জোনায়েদ কবীর সোহাগ বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ ব্যাপারে সকল প্রার্থীর সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

বিআরইউ