৩৮ দুর্বল ব্যাংক নিয়ে রিপোর্টের জের

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি, প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম

গত এক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যাংক বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সাংবাদিকরা অবস্থান করেন।

একই সময়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য বেলা ১১টার দিকে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই খাতায় নাম এন্ট্রি করে নির্ধারিত পাস নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করে আসছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে ৩৮টি দুর্বল ব্যাংক নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সাংবাদিকদের উপর ক্ষুব্দ হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর গত ১২ মার্চ এ ইস্যুতে জরুরি ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলন আহŸান করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। ওই সংবাদ সম্মেলনেই তিনি ৩৮টি দুর্বল ব্যাংক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গণমাধ্যম এটা প্রকাশ করতে পারে না। মুখপাত্রের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক বলেছিলেন, আপনারা যেটা প্রকাশ করেন সেটা আমাদের কাছে রিপোর্ট আর যেটা আপনারা গোপন করেন সেটাও আমাদের জন্য রিপোর্ট। এসময় হালকা উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়।

এরপর গত ২১ মার্চ থেকে হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের পাস ইস্যু বন্ধ করে দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয় যে কারো কিছু জানার প্রয়োজন হলে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে কোনো কর্মকর্তার কাছে যাওয়া যাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি ও অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে ব্যাংক বিটের বিপোর্টার রহিম শেখ বলেন, সাংবাদিকদের জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাংবাদিকরা পাস ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও বা কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এর আগেও পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে হতো। তবে ভেতরে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এতে তিনি কোনো সমাধান দেননি। এর প্রতিবাদে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।

এদিকে গভর্নরের সাথে ইআরএফ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মতে এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছেই আসতে পারবেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন, অন্য কোনো ফ্লোরে যেতে পারবেন না।

তবে আগের মতো তারা (সাংবাদিক) অবাধে কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে ব্যাংক বিটের একাধিক রিপোর্টার দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, মুখপাত্র যেটা বলেছেন সেটা আসলে কোনো সমাধান নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা পাস দিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে যাবে না। কারণ, কোন সাংবাদিক কোন কর্মকর্তার কাছে যাচ্ছে সেটাও নজরদারিতে রাখা হয়। এর আগে পাস দিয়ে দুয়েকজন কর্মকর্তা জেরার মুখেও পড়েছেন।

আরএস