অবশেষে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ১১:১০ এএম

ঋণের শর্ত পূরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর মিলেছে। চলতি অর্থবছরে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের আওতায় জুন মাসে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে আইএমএফ। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আইএমএফ অবশিষ্ট তহবিল ছাড়ে সম্মত হয়েছে।


ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে নমনীয়তা আনতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা বেচা-কেনায় ‘ক্রলিং পেগ’র করিডোর বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে, এতোদিন যেটা ছিল আড়াই শতাংশ। এই নমনীয়তার ফলে আটকে থাকা আইএমএফের ঋণের কিস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়লো।

এ বিষয়ে বুধবার (১৪ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সেখানেই আইএমএফের সঙ্গে ঋণ ছাড়সংক্রান্ত চূড়ান্ত সমঝোতার ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঋণ ছাড় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ঋণ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আইএমএফ-র সব ঋণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত জাড়িত থাকে।

অর্থনৈতিক সূচকের কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তিন মাস পর পর দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের জন্য বেধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখেছে সংস্থাটি। তাদের সন্তুষ্টির উপর ভিত্তি করে ঋণ ছাড় করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করার বিষয়ে তারা সন্তুষ্ট হয়েছে। তবে এখনও বিষয়টি চুড়ান্ত নয়।’

 ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের রিজার্ভ পূরণের শর্ত থেকে এক বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। শর্ত অনুযায়ী, আগামী জুনে নিট রিজার্ভ (এনআর) থাকতে হবে ১৭ বিলিয়নের কিছুটা বেশি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন। তবে আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। 

রিজার্ভের শর্তের পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতি পুরণ, সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহার, ডলার মার্কেট বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত ছিল অন্যতম।

জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক ডামাডোল সামলে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি এলেও ঘাটতিতে লাগাম টানতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর নানা পদক্ষেপের পরও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২ জুন সংকোচনমূলক বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে শুধু জ্বালনি খাতেই ৬০ হাজার কোটি টাকার উপরে ভর্তুকি প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জ্বালানী ও কৃষিখাত সহ সার্বিক ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়বে।

আইএমএফ-র সবচেয়ে কঠিন শর্ত ছিল ডলার রেট বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু এখন তা করতে মোটেই রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দামি নির্ধারণের প্রক্রিয়া এখনও চলমান। ক্রলিং পেগে বর্তমানে মধ্যবর্তী দর ১১৯ টাকা।

এর সঙ্গে বিদ্যমান আড়ই শতাংশের করিডোর যুক্ত করা আছে। অর্থাৎ ১১৯ টাকায় ডলার কিনলে তার সাথে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ যুক্ত করে বিক্রি করা যাবে। এর চেয়ে বেশি লাভ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রক্রিয়া বাতিলের কথা বললেও তা বাতিল করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। দর কশাকশি শেষে আড়াই শতাংশের পরিবর্তে চার শতাংশ করিডোর দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।। এর মানে ব্যাংকগুলো মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে চার শতাংশ বেশি বা কম দামে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে।

বিআরইউ