সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া সরকারের কোন পথ নাই: ডা: জাফরুল্লাহ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২২, ০৯:০৫ পিএম

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন,"সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এই সরকারের বিকল্প কোন পথ নেই। খালেদা জিয়াকে জামিন দেন।
খালেদা জিয়া, আপনার কোন ভয় নাই। আমরা আপনার পাশে আছি ‌‌। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন  খেলা চলবে না। ইভিএমের কোন  কারসাজি চলবে না। জনগণ এবার সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট)  বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে " বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত  "গুম ও সাদা পোশাকে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ ও ছাত্র জনতার সমাবেশ" এ  প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি গুম,খুন এবং নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন,  "আমেরিকার  গুয়ান্তানামো কারাগারের কথা আমরা সবাই বলি। এখন বাংলাদেশে আমেরিকার ঐ বন্দিশালার মতো আয়না ঘরের কথা শোনা যায়।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার তার রাজনৈতিক গুরু ফজলুল কাদের চৌধুরীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখতে গিয়েছিলেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী শেখ মুজিবুর রহমানকে বললেন, মুজিব তোমাকেও একদিন এই জায়গায় আসতে হবে।তাই ভালো কিছু কর।

সিরাজ শিকদার কে একবার গুম করা হয়েছিল। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে হাজির করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তার দলে যোগদান করার জন্য বলেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন আপনি আগামী বিজয় দিবস দেখতে পারবেন না। সত্যি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজয় দিবস দেখতে পারেন নাই।
তিনি আরো বলেন, দেশে এখন ৪০ লাখ বেকার যুবক আছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৪০ লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করতে হবে। আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর। এখন তা ৩০ বছর। ভবিষ্যতে সেটা ৩৫ থেকে ৪০ বছরে উন্নীত করতে হবে।
উৎপাদন বাড়ানোর জন্য  কৃষকদের কে ভর্তুকি দিতে হবে।

১৫ লাখ ড্রাইভার লাইসেন্স নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। তাদের কে লাইসেন্স দিয়ে দিতে হবে। একইসাথে নিরাপদ সড়কের বাস্তবায়ন করতে হবে।সমাবেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্র শিল্পী ও কারানির্যাতিত  মানবাধিকার কর্মী শহীদুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা আরমানুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়াসহ বিশিষ্টজনরা সংহতি প্রকাশ করেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক ও গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেছেন," ২০১৮ সালে আমাকে ধরার পর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন কে বলেছিল জঙ্গিকে ধরেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ছিল। আমাকে ধরার পর মাত্র ৭-৮ জন ছেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
আয়নাঘর নিয়ে একটা ভিডিও আমরা দেখেছি। আয়নাঘর নিয়ে কথা বলার কারণে আমিও গুম হয়ে যেতে পারি। সরকার আমাদের কারো নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে না।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক , ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি নাকি পুলিশের কাছ আসামি ছিনতাই করেছি। কোন ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই আমাকে চোখ বেঁধে গুম করা হয়েছিল। একদিন এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। তখন আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কে  আইনের আওতায় আনব।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক দিদারুল আলম বলেন,যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে দিয়ে তদন্ত করা যাবে না।তাই জাতিসংঘের  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। যেখানে নির্যাতিত মানুষের প্রতিনিধি থাকবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা আমাকে বলেছিল আমরা বিএনপির রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছি। সেখানে তোমরা টিএসসিতে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বল কেন?

গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লং মার্চ করার ঘোষণা দেন তিনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব এ দেশের ছাত্র সমাজকে আয়না ঘরের আস্তানা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় গুমের শিকার কারানির্যাতিত ছাত্রনেতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শাকিলুজ্জামান শাকিল, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা তারেক রহমান সহ ৫-৬ জন ছাত্রনেতা তাদের উপর বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের অভিযোগ এনে বক্তব্য রাখেন।

এবি