রাজাকারের নাতি ও বিএনপি নেতার পুত্র ঢাবি হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক

ঢাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২, ০৬:১০ পিএম

রাজাকারের নাতি ও বিএনপি নেতা শফিউর রহমান মুক্তার ছেলে মাহমুদুর রহমান আলিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে মনোনীত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের ২০৭ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পান আলিফ।

আলিফ ওই হলের ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিএনপি নেতার ছেলে ঢাবিতে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তাছাড়া আলিফের বিরুদ্ধে গত রমজান মাসে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট থেকে টাকা না দিয়ে পাঞ্জাবি নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার মো. শাহজাহান বলেন, "আলিফের বাড়ি টাঙাইলের ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নে। আলিফের বাবা শফিউর রহমান মুক্তা ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও তার দাদা আকবর আলী মৌলভী ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারের সদস্য ছিলেন।"

গত ২২ নভেম্বর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তালুকদার মো. শাহজাহান উল্লেখ করেন, "রাজাকারের বংশধরগণ যদি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হয় তাতে কি আমার মত আওয়ামী পরিবারের সন্তানের অন্তর জ্বালা হবে না? নির্মমতা কত দূর হলে ছাত্রলীগ হবে নিলর্জ্জ? বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।"

তিনি তার স্ট্যাটাসে আক্ষেপ করে বলেন, "মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন কাউকে নেতা বানানোর আগে তার পরিবার খোঁজ খবর নাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ এত বেশি খোঁজ খবর নিলেন যে, স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সহসভাপতির ছেলে কে ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক করে দিলেন! যার বাবা কিনা বিভিন্ন সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।"

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে মাহমুদুর রহমান আলিফের সাথে কথা বলতে চাইলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. শাহজাহান বলেন, "রাজাকারের বংশধরেরা যেখানে ছাত্রলীগের এত গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব পাচ্ছে সেখানে আমাদের জাত আওয়ামী পরিবারের সন্তানেরা অবহেলিত। তাছাড়া তার বাবাও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, "তারা বাবা প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা বিএনপির পদে ছিলেন, এখন তিনি রাজনৈতিকভাবেও নিষ্ক্রিয়। তাছাড়া তার দাদা একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার নয়। আঞ্চলিক বিভক্তির কারণে অন্য দল তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।"

তিনি আরো বলেন, "যেই ছেলে স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় তাকে তো আমরা অবহেলা করতে পারি না। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

টাকা না দিয়ে পাঞ্জাবি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, "এটা ভিত্তিহীন সংবাদ ছিলো, এর কোনো সত্যতা নেই। সকল ক্যম্পাসের ছাত্ররা বিশেষ ছাড়ে পাঞ্জাবি ক্রয় করে থাকেন। তিনিও ঢাবির ছাত্র হিসেবে কিছু ছাড়ে নিয়েছে, বিনামূল্যে বা জোরপূর্বক নেয়নি।"

হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, "আলিফ প্রথম বর্ষ থেকেই হল ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তার সাংগঠনিক দক্ষতা বা ছাত্রলীগের আদর্শের বিপরীতে কিছুই দেখিনি। তাছাড়া তার ব্যাপারে টাঙ্গাইল-২ আসলের এমপি ছোট মনির  সুপারিশও করেন। আমরা তার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তার সত্যতা নিশ্চিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

এআই