জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। হামলার পর থেকেই দুদেশ পাল্টাপাল্টি সামরিক প্রস্তুতি ও হুমকি-ধমকিতে জড়িয়েছে। সীমান্তে টানা সাত দিন ধরে চলছে গোলাগুলি। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশস্ত্র বাহিনীকে ‘অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীও আধুনিক অস্ত্র নিয়ে সীমান্তে মহড়া চালাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পেহেলগাম হামলার ঘটনায় ভারতের প্রতি সহমর্মতা জানিয়ে হেগসেথ বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনালাপে রাজনাথ সিং অভিযোগ করে বলেন, “পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন করে আসছে। তারা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক এবং অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে। বিশ্ব আর চুপ থাকতে পারে না।”
এদিকে, চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) কাছে পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে। ট্যাংক, কামান ও ভারী অস্ত্রসহ এ মহড়ায় অংশ নেয় বিভিন্ন ইউনিটের সেনারা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শত্রুপক্ষের যেকোনো হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই এই মহড়া।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে চীনও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। লাহোরে নিযুক্ত চীনা কনসাল জেনারেল ঝাও শিরেন বলেন, “সব পরিস্থিতিতে বেইজিং ইসলামাবাদের পাশে থাকবে।” তবে তিনি একইসঙ্গে ভারত-পাকিস্তানকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটি কাশ্মীর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হামলা। ভারত এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
এই ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকে একের পর এক কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দুই দেশের মধ্যে ১৯৬০ সালের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিতকরণ। পাশাপাশি আরও কয়েকটি কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে, ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে এবং দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্পষ্টভাবে বলেন, “পানি নিয়ে কোনো আপস হবে না। পাকিস্তান নিজের পানির অধিকার যেকোনো মূল্যে রক্ষা করবে।” এ নিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সিন্ধু দিয়ে পানি না বইলে রক্ত বইবে।”
সবচেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ ও রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি উভয়েই পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতির ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “পেহেলগাম হামলায় জড়িত প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাকে চিহ্নিত করে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প এই সন্ত্রাসবাদকে চূর্ণ করে দেবে।”
ইএইচ