রাবি ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার হুমকি: দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২, ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলের ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি এবং হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগেরই দুই নেতার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. তাজবিউল হাসান অপূর্ব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং হলের ২০৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাজবিউল হাসান অপূর্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী।

এছাড়াও তিনি শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনে ‘পদবঞ্চিত’ নেতা আমিনুল ইসলাম লিংকনের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিলেন।

অপূর্ব যে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ ও শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মিঠু। তারা দুজনই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। এদের মধ্যে মিনহাজ সভাপতির খুব ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বুধবার রাতে নিজ ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি হুমকির অভিযোগ করেন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, তিনি খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শেষ তিন-চার মাস কিছু কিছু কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত ছিলেন। দীর্ঘ সময় রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলেও নোংরা রাজনীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তার মাস্টার্সের দুইটা সাবজেক্টের পরীক্ষা হয়েছে, আরও তিনটা সাবজেক্টের পরীক্ষা এখনো বাকি। পারিবারিক কারণে তিনি ঢাকায় এসেছেন। পরীক্ষা শেষ হলে এমনিতেই হল ছাড়তেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই ছাত্রলীগ তার কক্ষ দখল করে নেয়।

হত্যার হুমকির বিষয়ে তিনি লিখেছেন, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি রাজশাহী পরীক্ষা দিতে আসলে তার লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টা দুঃখজনক। তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। বর্তমানে শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি, তারপরও ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণ আশা করেননি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমার মাস্টার্স শেষ হয়নি এখনো। আমি একটা কাজে বাড়িতে এসেছি। আসার আগে রুমের বাকিদের মজা করে বলেছি ভালো থাকিস তোরা। কিন্তু আজকে মিনহাজ এবং মিঠু আমার কক্ষে গিয়ে আমার রুমমেটকে আজকেই হল ছাড়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এটা জানার পর মিনহাজ ভাইকে কল দিই এবং বলি আমি তো এখনো হলের সভাপতির দায়িত্বে আছি। তাছাড়া আমার মাস্টার্সও শেষ হয় নি। কিন্তু সে আমায় গালাগাল করতে করতে থাকে আর বলে তুই আজকেই হল থেকে বের হবি।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইকে কল দিয়ে বলি ভাই আমার এখনো পরীক্ষা বাকি আছে। আর যখন চলে যাব কক্ষ তো আপনাকেই দিয়ে যাব। এটা শুনে বাবু ভাই বলে আচ্ছা আমি দেখছি। তারপর মিনহাজ ভাইকে আবার কল দিয়ে বলি বাবু ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তখন সে বলে এখন সব হলের দায়িত্বে আমি। আমি যা বলবো তাই হবে। তুই নেমে যাবি। তখন আমি বলি আমি তো ভাই ভেসে আসিনি। এখনো এই হলের সভাপতি আমি। তখন সে গালাগাল করে বলে তুই পরীক্ষা দিতে আয় তোর পা ভেঙে ফেলবো। তোর লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরপর আমি আবার বাবু ভাইকে কল দিলে তিনি বলেন তুমি মিনহাজের সাথে বেয়াদবি করেছো নাকি? তারপর বলে কল রাখো তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না আমার। এই বলে কল কেটে দেয়।

হলের আবাসিকতা আছে কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার পাঁচ বছরের হল ফি বাকি ছিল। মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় পুরো টাকা পরিশোধ করে আমি সিট বাতিল করে দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি আজকে শাহ মখদুম হলে যাইনি। আমি সারাদিন বঙ্গবন্ধু হলে ছিলাম। আমায় একজন দাওয়াত দিয়েছিল, আমি সেখানে পড়াশোনা করছিলাম। তার সাথে আমার আজকে সাংগঠনিক বিষয়ে কথা হয়েছে যেটা পার্সোনাল। সে কেন আমার নামে অভিযোগ করলো জানি না। তার (অপূর্ব) বিরুদ্ধে মান হানির মামলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ছাত্রলীগের একজন নাকি অপূর্বকে থ্রেট করেছে। এখানে মিনহাজ জড়িত নয়। মিনহাজের সঙ্গে অপূর্বর কথা হলে শিষ্টাচার মেনে কথা বলা উচিত ছিল যেহেতু মিনহাজ বয়সে বড়। আমি একটু বাইরে আছি। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

ইএইচ