নবনিযুক্ত কর্মচারীকে ‘প্রকাশ্যে মারধর’ কুবি ছাত্রদল নেতার

কুবি প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নিয়োগপ্রাপ্ত এক নবনিযুক্ত কর্মচারীকে যোগদানের দিনেই মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে। গত ৩ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী রেজিস্ট্রার দপ্তরে কার্য সহকারী পদে নিয়োগ পান এবং ঘটনার দিনই ছিল তার প্রথম কর্মদিবস। অভিযোগ উঠেছে, পূর্বে চাকরির জন্য অর্থ লেনদেন করেও নিজের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি না পাইয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ হামলা চালান ছাত্রদল নেতা মেহেদী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে ঢুকে অভিযুক্ত মেহেদী ভুক্তভোগীকে পরিচয় জানতে চেয়ে তার ‘হ্যাঁ’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে ক্যাম্পাস গেটের বাইরে ফের একদফা হেনস্তা করা হয়।

মেহেদী হাসান বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব না থাকলেও তিনি এখনো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। তিনি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারী বলেও পরিচিত।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মেহেদী বলেন, ‘আমি তাকে কল দিয়েছিলাম দেখা করার জন্য। প্রথমে সে কথা বলে, পরে ফোন বন্ধ করে দেয়। এতে আমার রাগ উঠে যায়। পরে রেজিস্ট্রার দপ্তরে পেয়ে রাগের মাথায় থাপ্পড় মারি।’

তবে এ ঘটনাকে মারাত্মক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈম ভূঁইয়া বলেন, এমন আচরণ শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এসব ঘটনা বাড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত মেহেদী দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক ভবনে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি তদবির ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা স্বীকার করেন, একটি পদ পেতে অর্থ লেনদেন হলেও চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থী চাকরি না পাওয়ায় ‘উস্কানিমূলকভাবে’ এ হামলা ঘটানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

ছাত্রদলের শাখা আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানতাম না। সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে এটি যায় না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী আমাকে ফোনে ঘটনা জানিয়েছেন। তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ওপর হামলারও অভিযোগ রয়েছে, যার বিচার এখনো হয়নি।

বিআরইউ