প্রাণিসেবা এখন মোবাইলে, ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে ‘ডিজিটাল খামারি’ অ্যাপ

বাকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভরসা কৃষি, যা গবাদিপশু ও পোলট্রি খামারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। দেশের অসংখ্য পরিবার এই খামারের ওপর নির্ভরশীল। 

তবে রোগ শনাক্তকরণে দেরি, যথাযথ চিকিৎসা ও টিকার অভাব এবং তথ্যের ঘাটতির কারণে অনেক খামার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘ডিজিটাল খামারি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ প্রাণিসেবায় এনেছে প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত।

বাংলাভাষায় নির্মিত এই অ্যাপটির নির্মাতা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।

অ্যাপটি খামারিদের জন্য সহজবোধ্য ও চিত্রসহ তথ্য দিয়ে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির রোগসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি একটি শিক্ষামূলক অ্যাপ, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে খামারিদের নিজের খামারের রোগ চিহ্নিত ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সক্ষম করে তোলে।

অ্যাপটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ভাষা ও চিত্রভিত্তিক ফিচার, যা শিক্ষাহীন খামারিরাও রোগ শনাক্ত করতে পারে। এতে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির সাধারণ ও জটিল রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বিস্তারিত বর্ণিত রয়েছে। প্রতিটি রোগের সাধারণ চিকিৎসা পরামর্শ ও টিকা সংক্রান্ত তথ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অ্যাপের মাধ্যমে খামারিরা জানতে পারবে কোন রোগে কী লক্ষণ দেখা যায়, কী ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, টিকা দেওয়ার সঠিক সময় এবং স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের তথ্য। এর ফলে প্রাণির মৃত্যু হার কমবে, চিকিৎসার খরচ বাঁচবে এবং খামারির আর্থিক ক্ষতিও কমবে।

অ্যাপের নির্মাতা অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান বলেন, “গ্রামাঞ্চলে পশু চিকিৎসকের অভাব প্রকট। অনেক সময় দূরবর্তী হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয় না। ডিজিটাল খামারি অ্যাপে স্থানীয় চিকিৎসকের নাম-ঠিকানাসহ যোগাযোগের তথ্য রয়েছে, যা খামারিদের জন্য বড় সুবিধা।”

গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘Digital Khamari’ নামে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এবং ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। এতে সচেতনতামূলক কনটেন্ট, রোগভিত্তিক চিকিৎসা নির্দেশনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক তথ্য সংযোজিত হয়েছে।

অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান আরও জানান, ভবিষ্যতে অ্যাপে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং খামার ব্যবস্থাপনার ক্যালেন্ডার ফিচার যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, “ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অ্যাপটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে যাতে এটি আরও ব্যবহারবান্ধব ও কার্যকর হয়।”

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে তৈরি এই অ্যাপ প্রাণিসেবা খাতে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ এবং গ্রামীণ উন্নয়নের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি কেবল তথ্য সরবরাহ নয়, বরং একটি আত্মনির্ভরশীল খামারি গড়ার সহায়ক হাতিয়ার। সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়লে তা খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও পুষ্টি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ, সুস্থ প্রাণি কেবল একটি পরিবারের নয়, একটি জাতিরও অমূল্য সম্পদ।

ইএইচ