বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ঢালিউড

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৫:১৫ পিএম

করোনার প্রভাবে থমকে গিয়েছিল ঢালিউড। ২০২১ সালেও ছিল মহামারির প্রভাব, ২০২২ সালকে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবে নিয়েছিল ঢাকাই সিনেমা। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০২২। বছর শেষে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব কষছে ঢাকাই সিনেমা।

২০২২ সালে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল ঢালিউড। পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন কয়েকটি সিনেমা। তা থেকে সুদিন ফেরার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একনজরে দেখে নেয়া যাক- ২০২২ সালে কেমন ছিল বাংলা সিনেমা হাল।

বেড়েছে সিনেমা মুক্তি : ২০২১ সালে বছর জুড়ে মুক্তি পেয়েছিল ৩২টি সিনেমা। তার মধ্যে আমদানি করা ছিল ২টি। ২০২২ সালে বেড়েছে সিনেমা মুক্তি। এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৪৯টি, বছরের শেষ শুক্রবার মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরও ২টি সিনেমা। ‘বীরাঙ্গনা ৭১’ ও ‘মেঘ রোদ্দুর খেলা’ সিনেমা দুটি ৩০ ডিসেম্বর মুক্তির কথা রয়েছে। এমন তথ্যই পাওয়া গেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতির সূত্রে।

শুরুটা মন্দের ভালো : বছরের শুরুটা জমিয়ে করতে পারেনি ঢালিউড। ১৪ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল এইচ আর হাবিব পরিচালিত ‘ছিটমহল’ সিনেমাটি। খুবই অল্প সংখ্যক হলে মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি। এরপরের সপ্তাহে মুক্তি পায় এম কে জামান পরিচালিত ‘তোর মাঝেই আমার প্রেম’। এরপর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ আর ‘মাফিয়া-১’ সিনেমা দুটি। শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মাফিয়া-১’ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। অন্যদিকে ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ সিনেমাটি দর্শক টানতে সক্ষম হয়।

সর্বোচ্চ সিনেমা মুক্তি মার্চে : ২০২২ সালে মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। মুক্তি পাওয়া অধিকাংশ সিনেমাই প্রশংসিত হয়েছে। শুরুটা হয়েছিল ইফতেখার শুভ পরিচালিত অনুদানের সিনেমা ‘মুখোশ’ দিয়ে। এরপর রুবাইয়াত হোসেনের ‘শিমু’, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘গুণিন’, শাহ আলম মণ্ডলের ‘লকডাউন লাভ স্টোরি’ আর সাজ্জাদ হায়দারের ‘জাল ছেঁড়ার সময়’।

হতাশ করা ঈদুল ফিতর : ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছিল চারটি সিনেমা। সেলিম খানের ‘বিদ্রোহী’, এম রাহিমের ‘শান’, এস এ হক অলিকের ‘গলুই’, জুয়েল ফারসির ‘বড্ড ভালোবাসি’। শাকিব খানের দুটি সিনেমার বিপরীতে সিয়ামের ‘শান’। চারটি সিনেমার মধ্যে তুলনামূলকভাবে ‘শান’ সিনেমাটি দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছিল। তার পরের অবস্থানে শাকিব-পূজা চেরি অভিনীত ‘গলুই’। শহরে দর্শক না টানলেও শহরের বাইরে দর্শকের মুখ দেখেছে অনুদানের এ সিনেমাটি। তবে ঈদুল ফিতরে ভালো ব্যবসা না করতে পেরে হতাশ হয়েছিলেন হল মালিকেরা। বিশেষ করে শাকিব খানের দুটি সিনেমা আশানুরূপ সফলতা না পাওয়ায় তাদের হতাশার কারণ ছিল।

ঘুরে দাঁড়ানোর ঈদুল আজহা : ঢাকাই সিনেমা ২০২২ সালে আলোর মুখ দেখে জুলাই মাসে। শাকিব খান ছাড়া প্রথমবার কোনো ঈদ হলো এ বছর। ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছিল তিনটি সিনেমা। অনন্ত জলিলের ‘দিন-দ্য ডে’, রায়হান রাফির ‘পরান’, অনন্য মামুনের ‘সাইকো’। ঢাকার অধিকাংশ হল চলে যায় ‘দিন-দ্য ডে’র দখলে। উল্লেখযোগ্য কিছু হল দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘পরান’। এই দুই সিনেমার চাপে তলানীতে পড়ে যায় ‘সাইকো’। প্রথম সপ্তাহের চতুর্থদিনে সিনেপ্লেক্সগুলোতে দর্শক টানতে শুরু করে ‘দিন-দ্য ডে’ আর ‘পরান’। দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘পরান’ দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দিন যত বাড়তে থাকে দর্শক ততই হলমুখী হতে থাকে।

পালে হাওয়া : ‘পরান’, ‘দিন-দ্য ডে’ সিনেমার দর্শক টানার তালিকায় যোগ হয় মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। ২৯ জুলাই মুক্তি পেয়েছিল এটি। পাল্লা দিয়ে মাল্টিপ্লেক্সে চলতে থাকে ‘পরান’ ও ‘হাওয়া’। জিমিয়ে পরা চলচ্চিত্রের আঁতুর ঘরে প্রাণের হাওয়া সঞ্চার করে সিনেমাটি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সাফল্যে ছাপ রাখে সিনেমা দুটি। এরপর ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘দামাল’ দর্শকের মুখ দেখে। এছাড়া আর কোনো সিনেমা তেমনভাবে দর্শকদের মুখ দেখেনি।

হয়নি ছবি আমদানি, বেড়েছে অনুদানের সিনেমা মুক্তি : ২০২২ সালে আমদানি করা কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। ২০২১ সালে ২টি আমদানির ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেগুলো অবশ্য মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আমদানির পাশাপাশি এ বছর যৌথ প্রযোজনার কোনো সিনেমাও মুক্তি পায়নি। অন্যদিকে বেড়েছে অনুদানের সিনেমা মুক্তি। এখন পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ‘মুখোশ’, ‘গলুই’, ‘আশীর্বাদ’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘দেশান্তর’, ‘ভাঙন’, ‘হডসনের বন্দুক’, ‘জয় বাংলা’ সিনেমাগুলো। বছরের শেষ শুক্রবার মুক্তি পাবে অনুদানের সিনেমার ‘মেঘ রোদ্দুর খেলা’। অনুদানের সিনেমা মুক্তির সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিনেপ্লেক্সে যোগ হয়েছে নতুন স্ক্রিন : এ বছর সিঙ্গেল স্ক্রিনের তুলনায় বেশ এগিয়ে ছিল মাল্টিপ্লেক্স। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হলগুলো বেশি দর্শক টেনেছে। বছর শেষে মাল্টিপ্লেক্সে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি স্ক্রিন। চট্টগ্রামে নতুন তিনটি হল চালু করেছে সিনেপ্লক্সে। সবমিলিয়ে ২০টি হল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। নতুন বছরে রাজশাহী, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় সিনেপ্লেক্স চালু পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।

বছর শেষে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা বলছেন সিনেমাপাড়ার অনেকে। বাংলা সিনেমার হারানো সুদিন ফিরিয়ে আনতে গল্প নির্ভর সিনেমার বিকল্প নেই। উদাহরণ হিসেবে ‘পরান’, ‘হাওয়া’র কথা বলা যেতেই পারে। দর্শক টানার মতো সিনেমা মুক্তি দিতে পারলেই হারানো সুদিন ফেরার পথে এগিয়ে যাবে বাংলা সিনেমা।

এসএম