মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত

কিছুতেই কাঁটাতারের বেড়া চায় না মিজোরাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম

ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও বেড়া লাগানো হয়নি মিয়ানমার সীমান্তে। বর্ডার পাস থাকলেও মিয়ানমার সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার ও ভারতীয় সীমান্তের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকতে পারেন দুই দেশের কুকি, জো, চিন জনজাতির মানুষ।

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও বর্ডার পাস বন্ধের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের সায় নেই। কারণ— এখানে বেড়া বসাতে দেবে না রাজ্যটি।

মূলত মিজোরামের মধ্যে ইয়ং মিজোরাম অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমএ এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন। তাঁর সভাপতি লালমাছুয়ানা জানিয়েছেন, ‘নাগাল্যান্ড কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিরোধী। মিজোরামের সাংসদরা বিরোধিতা করেছেন, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধিতা করেছেন। নাগাল্যান্ডের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছি। ভারত সরকারকে কোনোভাবেই এই কাজ করতে দেয়া হবে না।’

এর আগে গত সপ্তাহে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একইসঙ্গে সীমান্ত এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য বিশেষ পথ নির্মাণ করা হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি।

এর অবশ্য একটা বিশেষ প্রেক্ষাপট আছে। এখানকার মানুষের বক্তব্য, জো, কুকি ও চিন একই জনজাতির মানুষ। ব্রিটিশ আমলে তারা একসঙ্গে বসবাস করতেন। দেশভাগের পর একটা দল সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে থেকে যায়, একটা দল ভারতে বসবাস করে এবং একটা দল মিয়ানমারে থাকে। এদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক আছে, বাণিজ্য সম্পর্ক আছে এবং নিয়মিত যাতায়াতও আছে।

এদিকে মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনার পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও মেইতেইরা জানিয়েছে, মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে প্রচুর সশস্ত্র মানুষ মণিপুর ঢুকছে এবং তারা মেইতেইদের আক্রমণ করছে। তারপর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও বর্ডার পাস বন্ধ করার কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

মিজোরাম চম্পাইয়ের ব্লক রিসোর্স সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর লালরিনমুয়ানা বলেছেন, ‘আমরা (কুকি, জো, চিন) সবাই ভাই। বুঝতে হবে, এটা আমাদের গ্রেটার ল্যান্ড। আমরা এখানে বেড়া বসাতে দেব না। এত অভিবাসী এখানে আছেন। তাদের তাহলে কী হবে?’ তার স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ‘মণিপুর চাইলে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগাক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা এখানে কাঁটাতারের বেড়া লাগাতে বা বর্ডার পাস বন্ধ করতে দেব না।’

সরকার তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করলে কী করবেন? 

লালরিনমুয়ানার বক্তব্য, ‘এখন সে ব্যাপারে কিছু বলব না। সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিলে তখন দেখা যাবে।’

অন্যদিকে মিজোরাম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের চিন রাজ্য। সেখানে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই সংগঠন হলো পিপলস ডিফেন্স ফোর্স(পিডিএ) ও চিন ডিফেন্স ফোর্স(সিডিএফ)। তারা আবার চীন ন্যাশনাল ফোর্সের অধীনে। এই ফোর্সের সদস্যরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনারা এখন বিদ্রোহী। তারাই বিদ্রোহী দুই সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং পুরো এলাকার দখল নিয়ে রেখেছে। সীমান্তে এখন চিন ডিফেন্স ফোর্সের আউটপোস্ট রয়েছে। মিয়ানমারের কোনো সেনা এখানে নেই। তবে তারাও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পক্ষে নেই।

বিআরইউ