টানা কয়েকদিনের হামলা-পাল্টা হামলা ও তীব্র উত্তেজনার পর যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমানে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন।
যদিও উত্তেজনার পারদ কিছুটা কমেছে, তবুও সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ক্ষয়ক্ষতি সীমান্ত এলাকায় স্পষ্ট। বিশেষ করে পাকিস্তানি হামলায় ভারতের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ১০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন অসংখ্য পরিবার।
হামলার ভয়াবহ চিত্র
সোমবার কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘অপারেশন সিন্দুর’ ও পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শত শত গ্রাম বিধ্বস্ত হয়েছে। পুঞ্চ, কুপওয়ারা, বারামুলা ও রাজৌরি—এই সীমান্তবর্তী জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা জম্মুর পুঞ্চ জেলায়, যেখানে নিহত ২২ জনের মধ্যে ১৪ জনই ওই জেলার বাসিন্দা।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের সংসদ সদস্য আজাজ জান জানান, পুঞ্চ জেলার ৯০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে অন্তত ৬০টিতে হাজার হাজার বাড়ি ও ভবন গুঁড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “এত বড় মাত্রার হামলা এর আগে এই এলাকায় দেখা যায়নি। পুরো গ্রামজুড়ে একটি বাড়িও অবশিষ্ট নেই। পাহাড়ি এলাকার টিনের চালা কোনোভাবেই গোলার আঘাত ঠেকাতে পারেনি।”
তিনি আরও জানান, এলাকা ভূকম্পনপ্রবণ হওয়ায় যেসব বাড়ি আংশিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোও ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের জন্য তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে জরুরি ক্ষতিপূরণ ও সহায়তার আবেদন জানান।
কারনা ও উরিতে ভয়াবহ ক্ষতি
এদিকে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উরি ও কারনা অঞ্চলও। কারনায় শতাধিক এবং উরিতে প্রায় ৪৫৮টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের আরেক সংসদ সদস্য জাভিদ আহমেদ জানিয়েছেন, “সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়া বাড়ির জন্য ১০ লাখ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ রাশিদ বলেন, “গোলাবর্ষণ শুরু হলে আমরা বাঙ্কারে আশ্রয় নিই। পরে বাইরে এসে দেখি আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমরা আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।”
প্রশাসনের আশ্বাস
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উপদেষ্টা মাসির আসলাম ওয়ানি সীমান্ত অঞ্চলের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, “দুর্গতদের আর্থিক সহায়তা দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। পূনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও পুঞ্চ সফর করে দুর্গতদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইএইচ