হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ১১:৩২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটির হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছে। যার ফলে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী হুমকির মুখে পড়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ইহুদি-বিদ্বেষ, হামাস-পন্থী সহানুভূতি এবং বৈষম্যমূলক বৈচিত্র্য নীতি সম্পর্কে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তরের সচিব ক্রিস্টি নোম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট দিয়ে জানান, হার্ভার্ড ‘আইন মানতে ব্যর্থ হওয়ায়’ তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা।’ এর আগে, গত মাসে 'প্রশাসনের কথা মতো কাজ না করলে' বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি বাতিলের হুমকি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। পাশাপাশি, হার্ভার্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দও বাতিল করে সরকার।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পাশে আছি। তারা ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে এসে হার্ভার্ড ও আমেরিকাকে সমৃদ্ধ করেছে। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড এবং দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির হুমকি তৈরি করছে।’
গত শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে ৬ হাজার ৭০০-এরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিলেন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭শতাংশ। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী সারাহ ডেভিস বলেন, ‘আমরা সবাই এক ধরনের ধোঁয়াশায় আছি। আমাদের অনেকেরই মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎকে ঘিরে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।’

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ককাসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সারাহ আরো বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য।’

হার্ভার্ডের স্নাতক শ্রেণির সুইডিশ শিক্ষার্থী লিও গার্ডেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের দ্বন্দ্বে তাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত অবমাননাকর।’

সুইডেনের শিক্ষার্থী লিও গারডেন বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিঠি পাওয়া ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। অথচ আজ আমাদের রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যে ‘বোঝা’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ভীষণ অপমানজনক।’

প্রশাসন ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানকেও চাপে ফেলেছে। তবে হার্ভার্ড প্রথম বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। সরকার হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি তুলেছে, যার মধ্যে রয়েছে নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদানের পদ্ধতি বদলানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত সুবিধা বাতিল করার হুমকি।

অবশেষে, বৃহস্পতিবার ডিএইচএস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, হার্ভার্ড আগামী ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এফ ও জে ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারবে না। ওইসব শিক্ষার্থীকে আইনি অবস্থান বজায় রাখতে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর হতে হবে। হার্ভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে শেষ পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের শাস্তিমূলক রেকর্ডসহ ভিডিও, অডিও প্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছে। এটি না করলে তাদের ছাত্রভর্তি সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ থাকবে না বলেও জানানো হয়।

এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল সংক্রান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। লিও গার্ডেন বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা এবং একটি উদার মননশীল পরিবেশের খোঁজে। কিন্তু ট্রাম্প এখন সেই মূল মূল্যবোধগুলোই হুমকির মুখে ফেলছেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ছাড়া হার্ভার্ড আর হার্ভার্ড থাকবে না।’

বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার সক্ষমতা হারিয়ে বড় আকারে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে হার্ভার্ড। প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন বাবদ লাখো ডলার উপার্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

বিআরইউ