গোপনে ‘ইসরায়েল’ থেকে ২২শ কোটি টাকার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আওয়ামী লীগ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

গত এক দশকে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি ও স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রযুক্তি-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক ৭০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাইবার নজরদারি প্রযুক্তি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং গণবিক্ষোভ দমনের ক্ষেত্রে। এসব প্রযুক্তি কেনার প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ এবং প্রাথমিকভাবে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।

২০০১ সালের ৯/১১ হামলা এবং ২০১৬ সালের ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর নজরদারি ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। ফলে বাংলাদেশে নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের থেকে আধুনিক সাইবার-ভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানিকৃত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর, সেলিব্রাইট, ফিনফিশার ও প্রিডেটরসহ উন্নত স্পাইওয়্যার। এসব প্রযুক্তি দিয়ে বিস্তৃত পরিসরে, প্রায়ই কোনো ধরনের আদালতের অনুমতি ছাড়াই নজরদারি চালানো সম্ভব।

১৯০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ‘ইসরায়েলি’ উৎস থেকে আসা প্রযুক্তির জন্য, যা স্বৈরাচারী সরকারেরাও ব্যবহার করে থাকে। তবে বাংলাদেশ ও ‘ইসরায়েল’ আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও, ‘ইসরায়েলি’ কোম্পানিগুলোর স্পাইওয়্যার সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে।

র‌্যাব ও পুলিশ মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল জ্যামিং ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ডিজিএফআই ফোনালাপ ট্যাপ ও সিগন্যাল জ্যামিংয়ের অবকাঠামো তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে। ২০১৫ সালে ফিনফিশার স্পাইওয়্যার কিনেছিল বাংলাদেশ, যা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে তথ্য চুরি করতে সক্ষম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থার আইনি ভিত্তি পুরোনো আইনগুলো, যেমন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১, টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫ ও ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন, ১৯৩৩। এসব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যাপক নজরদারির ক্ষমতা দিয়েছে, কিন্তু সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই।

২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তি কেনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে, যা রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলন দমনের লক্ষণ। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে র‌্যাবকে জনসমাবেশ ও বিক্ষোভে ব্যবহারের জন্য মোবাইল ইন্টারসেপশন ডিভাইস কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন জরুরি আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে, নতুবা বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বৈরাচারী শাসনের সম্ভাবনা বাড়বে, যেখানে নজরদারি জনগণের নিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

ইএইচ