তাজরীন ট্র্যাজেডির এক দশক: আটকে আছে বিচারকাজ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ১০:১৭ এএম

ঢাকা জেলাধীন আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার। দীর্ঘ এ সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণের গণ্ডিই পেরোতে পারেনি বিচারকাজ। এখন পর্যন্ত এই মামলার এক শ চারজন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন। কবে নাগাদ এই বিচারকাজ শেষ হবে তা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা আসামিপক্ষ, কেউই নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।

দেশের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম তাজরীন গার্মেন্টসের ঘটনা। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সংঘটিত এ অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শ জন।

অগ্নিকাণ্ডের পরদিন অর্থ্যাৎ ২৫ নভেম্বর আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১০ বছর, শেষ হয়নি বিচারকাজ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, সাক্ষীরা নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। তারা বলতে পারছেন না মামলাটি শেষ করতে আর কতদিন লাগবে।

বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এ মামলাটি বিচারাধীন আছে। সবশেষ গত ৪ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় আদালত পরবর্তী তারিখ ১ জানুয়ারি ধার্য করেন। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে তাজরীন ফ্যাশনসের এমডি দেলোয়ারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, গত সাত বছরে এ মামলায় ২০১৬ সালে পাঁচজন, ২০১৭ সালে দুজন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে মোট দুজন এবং ২০২২ সালে দুজনসহ সর্বমোট ১১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৮ ও ২০২০ সালে কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দেননি।

দেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ ট্র্যাজেডির ঘটনায় ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল।

এই ১৩ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক এবং বাকি নয়জন জামিনে আছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- মোবারক হোসেন মঞ্জু, রানা ওরফে আনারুল, শামিম মিয়া ও আল আমিন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে যে ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে, তারা হলেন, আশুলিয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক এস এম বদরুল আলম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তফা কামাল, আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী উপপরিদর্শক মো. জাহিদুর রহমান, উপপরিদর্শক মো. রবিউল আলম ও এএসআই মো. শফিকুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ কে এম শাহনেওয়াজ বলেন, আলোচিত এ মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সবশেষ অগ্রগতি অনুযায়ী মাত্র ১১ জন সাক্ষী দিয়েছেন। ছয় পুলিশ সদস্যসহ ২৬ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হননি। তাদের গ্রেপ্তার করে সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত করা হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেন না। সাক্ষ্য দিতে তাদের কোনো আগ্রহও দেখা যায় না।

বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত কোনো অগ্রগতি হয়নি এ মামলায়। এ অবস্থায় আসামিপক্ষ চাইছেন মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।

এ ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ টি এম গোলাম গাউস বলেন, মামলার অধিকাংশ সাক্ষীই নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এ কারণে বিচারকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়।

এ অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তিতে সময়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ কে এম শাহ নেওয়াজ বলেন, মামলাটি নিষ্পত্তি করতে সময়ের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সাক্ষ্যগ্রহণের দিন সাক্ষী যদি আসে, তবে ছয় মাসে বিচারকাজ শেষ করে দেওয়া যাবে। না আসলে আরও দশ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্ভব না। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সাক্ষীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের আদালতে হাজির করে যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি।

 

ইএফ