আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রশ্ন। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW) সাফ জানিয়ে দিয়েছে—তুরিন আফরোজ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেননি।
রোববার (৪ মে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তুরিন আফরোজের পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় দাখিল করা এক নথিতে উঠে আসে এ তথ্য।
আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার বলেন, “সরাসরি ই–মেইলের মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস আমাদের নিশ্চিত করেছে যে, তুরিন আফরোজ ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেননি। এমনকি তাঁর নামে কোনো শিক্ষার্থীও তাদের রেকর্ডে নেই।”
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তুরিন আফরোজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত নথি আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো রেকর্ড নেই।
তথ্যটি প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি ঘিরে আইন অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা।
এদিকে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ডিগ্রি জালিয়াতির অভিযোগ সামনে এসেছে এমন এক সময়, যখন তিনি পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েছেন নিজের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে।
উত্তরার রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের একটি পাঁচতলা বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই বিরোধ।
২০১৮ সালে ওই বাড়ির ভোগদখল নিয়ে তুরিন আফরোজ ও তাঁর ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ আলাদাভাবে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন। আদালত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে হাইকোর্ট সেই আদেশ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজ আহমেদের পক্ষে রায় দেন।
আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে এখন শামসুন্নাহার ও শাহনেওয়াজের উক্ত বাড়িতে বসবাসে আর কোনো আইনগত বাধা নেই।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে উত্তরার ওই বাড়ির জমি কেনেন শামসুন্নাহার বেগম। পরে ১৯৯৭ সালে তিনি ছেলেকে হেবা (দান) করেন সম্পত্তিটি। এরপর রাজউকের অনুমোদিত নকশায় গৃহনির্মাণ করে ২০০২ সাল থেকে মা ও ছেলে ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে নিজের প্রভাব খাটিয়ে তুরিন আফরোজ মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর বাড়ির মালিকানা দাবি করে মামলাও করেন।
মামলায় তুরিন দাবি করেন, তাঁর বাবা ১৯৯৪ সালে তাঁকে হেবা করেছেন। যদিও মা ও ভাইয়ের দাবি, কখনোই তুরিনকে ওই সম্পত্তি দেওয়া হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে এবার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েও তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ সামনে আসায় মামলার প্রেক্ষাপট নতুন মোড় নিয়েছে।
সাবেক প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তার পেশাগত ও সামাজিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—আইনজীবী মহলে এমনই প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
বিআরইউ