হাসিনা-কাদের-নিজাম হাজারীসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ফেনী জেলা প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম (২৫) হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ মোট ২২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।

পুলিশ সুপার জানান, এ মামলায় ১৫৬ জন এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ৬৫ জনসহ মোট ২২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়া ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছে। তারমধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারনামীয় ও আরও ৪ হাজার অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মহিপালে মাসুম হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মূলত: পুলিশের বিভিন্ন তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তারাই চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখানে কে কোন রাজনৈতিক দলের তা বিবেচনা করা হয়নি।

পুলিশ জানায়, গেল বছরের ৪ আগস্ট মাসুম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নির্দেশদাতার ভূমিকা পালন করেন শেখ হাসিনা ও নিজাম উদ্দিন হাজারী। এছাড়া ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, পরশুরাম পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পিটু ও জিয়া উদ্দিন বাবলুসহ অনেকের নাম চার্জশিটে এসেছে।

এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে আয়োজিত ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম।

পরে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৭ আগস্ট তিনি মারা যান।

পরবর্তীতে নিহতের বড় ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জানান, এজাহারভুক্ত ১২ জনসহ মোট ৫১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। যাদের একজন হলেন মুরাদ হাসান বাবু।

মামলার বাদী ও নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার ভাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

বিআরইউ