শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

আদালত প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম

মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্ত প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও আদালতের কর্মচারীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

রোববার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠান প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। 

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত ২ জুলাই এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও এ মামলায় দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের দুজনের কথোপকথন সম্বলিত একটি অডিও গত বছরের অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে কথোপকথনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি নয়।

গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। বুলবুলও পলাতক।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও বুলবুলের ফাঁস হওয়া কথোপকথনের অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।” রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বক্তব্যের মাধ্যমে হাসিনা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন।

আরেক জায়গায় শেখ হাসিনা বলেন, “আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছিৃ সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব।” রায়ে বলা হয়েছে, এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন।

অডিওতে আরও শোনা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিতও দেন শেখ হাসিনা। কথোপকথনে তিনি বলেন, “আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।”

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরে প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির আলাদা তদন্তও করেন। তদন্তে জানা যায়, গাইবান্ধার সাংবাদিক সুমন মিয়া প্রথমে অডিওটি পান এবং বুলবুল সেটি স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।

তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, ‘এ টিম’ নামের একটি অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ও জুমে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) গোপন সভা হতো। গত বছরের ২৫ অক্টোবর এমন এক সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।

ইএইচ