রাষ্ট্র ও দুদকের সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক: হাইকোর্ট

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২, ০২:৪৯ পিএম

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তার সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে রোববার (১৪ আগস্ট) এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ। আদালতে দুদকের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

রাষ্ট্রপক্ষে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের বক্তব্য তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

১০ আগস্ট (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

পরদিন বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিষয়টি নজরে নিয়ে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে সুইস রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বক্তব্যে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের অনুলিপিও দাখিল করতে বলেন।

সে অনুসারে রাষ্ট্রপক্ষ ৪টি জাতীয় পত্রিকা এবং দুদক একটি পত্রিকা আদালতে দাখিল করে। এছাড়া উভয়পক্ষ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর আদালত এ বিষয়ে লিখিত আকারে দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২১ আগস্ট দিন রাখেন।

আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় বলেছেন, মিথ্যা বলেছেন।

আমিন উদ্দিন মানিক আরও বলেন, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এ তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব।

২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ।

ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর এ একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।

আমিন উদ্দিন মানিক আরও বলেন, রাষ্ট্রদূত না জেনে বক্তব্য দিয়েছেন। উনি সঠিক বলেননি।

তখন আদালত বলেন, তার মানে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে, ওনারা তথ্য দেননি?

জবাবে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, জ্বি, রাষ্ট্রদূত সঠিক তথ্য বলেননি।

পরে দুদকের আইনজীবী আদালতে বলেন, এখন এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের একটা বক্তব্য দিতে হবে। কারণ ডিক্যাব টকে দেওয়া উনার দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয়। হুট করে কীভাবে এমন কথা বললেন, এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

দুদকের আইনজীবী আরও বলেন, ২০১৪,২০১৯ এবং ২০২১ সালে বিএফআইইউর কাছে দুদক তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেছিল। দুদকের এ অনুরোধে বিএফআইউ তথ্যের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর কাছে অনুরোধ করে। কিন্তু বিএফআইইউ শুধু একটা তথ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত এটা জানেন না। জানলে এমন বক্তব্য দিতেন না। এটা টোটালি ইগনোরেন্স (অজ্ঞতা) থেকে দেওয়া।

তখন আদালত বলেন, এ বক্তব্য বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনাদের (দুদক-রাষ্ট্রপক্ষের) বক্তব্যের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করবে।

এবি