মদনে হাওরাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ০৩:৫০ পিএম

মাছের ভাণ্ডার হিসাবে খ্যাত হাওরাঞ্চল নেত্রকোনার মদন উপজেলা। এক সময় মিঠা পানির বহু প্রজাতির মাছের দেখা মিলতো এ উপজেলায়। এ এলাকার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন জাগায়। কিন্তু দিনদিনই হারিয়ে যাচ্ছে মিঠা পানির বহু প্রজাতির মাছ।

জানা যায়, এ উপজেলায় ৫টি হাওরে ছোট বড় অনকে বিল রয়েছে। ভরা মৌসুমে হাটবাজার গুলোতে মিঠা পানির বড় মাছে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে হাটবাজার গুলোতে কয়েক প্রকারের পোনা মাছ ছাড়া বড় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই মিঠা পানির আইর-গুজি, চিতল, কাল বাউশ, রিটা, রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাস, শোল-গজার, বাগাইর, গাং মুগুরসহ বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বর্ষার পানি আসার সাথে সাথেই এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য শিকারি সরকার নিষিদ্ধ কারেন্ট, কণা, মশারি জাল দিয়ে মা মাছসহ পোনা মাছ নিধন করায় এবং শুকনো মৌসুমে বাঁশের বায়না দিয়ে ঘেরাও করে পানি শুকিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন নতুন পানি আসার সাথে সাথেই বিভিন্ন এলাকার অসৎ মৎস্যজীবীদের সাথে আলোচনা করে মা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ করলে মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলের লোকজন মিঠা পানির ছোট-বড় মাছের অভাব পূরণ করে পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা পেত।

এছাড়া মদন উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয় গুলোসহ সব জলাশয় মসজিদ-মাদ্রাসার নামে ইজারা পত্তন হয়ে যাওয়ায় দরিদ্র লোকজন ঠাক-ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে না। আর ইজারাদারগণ তাদের ইচ্ছা মাফিক পানি সেচন করে মাছ ধরছে।

তিয়শ্রী গ্রামের মৎস্যজীবী হরিদাস বর্মণ, চন্দন বর্মনসহ অনেকে জানান, এখন জাল ফেলে মাছ ধরার কোন স্থান পাচ্ছি না। এলাকার সবগুলো জলাশয় পত্তন দেয়ায় আমাদের জেলে পরিবার গুলো এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। অল্প কিছু মাছ ধরলেও এখন আগের মতো মাছও পাওয়া যায় না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন মহলের কয়েকজন জানান, এ সময়ে স্থানীয় হাটবাজার গুলোতে বড় মাছে সয়লাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে বড় মাছের আকাল। প্রশাসন এবং জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্ভাবনাময় এ এলাকার মিঠা পানির মাছের অভাব দূর করা সম্ভব। মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত এ এলাকার জনগণ যাতে পুষ্টিহীনতায় না ভোগে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভরাট, অপরিকল্পিত চাষাবাদ, অবৈধ জাল ব্যবহার, আবাসস্থল ধ্বংস, নদীতে বাঁধ দিয়ে মা মাছ নিধন ইত্যাদি কারণে হাওরের মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বৃদ্ধির জন্য মৎস্য দপ্তর থেকে নিয়মিত হাওরে অভিযান এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছ। বাজারে মনিটরিং করা হচ্ছে, জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মত বিনিময় সভা, সচেতনমুলক সভা, মাইকিং, পোস্টার এবং লিপলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মাছের বাজার এবং ঘাটে, দেশীয় মাছ বৃদ্ধির জন্য মদন ইউনিয়নের নাগডোরা বিলে অভয়াশ্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার এবং মৎস্য দপ্তরের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে। আশা করি অচিরেই হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।

এসএম