চলতি আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধভাবে পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা—এমন আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীজুড়ে শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান।
সম্প্রতি রাজধানীতে একটি ‘গোপন বৈঠক’ এবং তাতে একজন সেনা কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য সামনে আসায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা ও উদ্বেগ। এই প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, রাজধানীর আবাসিক হোটেল, মেস, ছাত্রাবাস ও নেতাকর্মীদের বাসস্থানগুলোতে তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বস্তি এলাকায়ও নজরদারি ও অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো আগস্টজুড়ে এই অভিযান চলবে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে সুনির্দিষ্ট নজরদারি চালানো হবে। ঢাকার বাইরে থেকে কেউ হোটেলে অবস্থান করলে তার পরিচয়পত্র যাচাই করা হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ না জানাতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘গোপন প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার অভিযোগে সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা—মেজর সাদিককে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার আশঙ্কায় চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, মেস ও বস্তি এলাকায়ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি টিম, থানা ও ইউনিট কাজ করছে।”
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে অনেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। তবে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিলছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে র্যাব তৎপর রয়েছে। রাজধানীতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই রাজধানীর বসুন্ধরা সংলগ্ন কেবি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। দিনভর ওই বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০–৪০০ জন অংশ নেন। সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়।
বৈঠকে শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশ থেকে ঢাকায় কর্মী জড়ো করা, শাহবাগ মোড় দখল করে অস্থিরতা তৈরি, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, এবং শেখ হাসিনার দেশে ‘নিরাপদ প্রত্যাবর্তন’ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা হয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
ইএইচ