মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বহু তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হাত-পা-চোখ হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ রেখে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না।
শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবনির্মিত ছয়তলা একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও এসএসসি ২০২৫ সালের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, বেগম রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য স্বাধীন পরিবেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হতো। শুধু বই পড়লেই সব জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়, কারণ ইতিহাস বারবার বিকৃত হয়েছে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্কুলের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। ইভটিজিংয়ের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—নতুন বাংলাদেশে তা হতে দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুল ও এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে, কারণ এগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পুষ্টি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড়ে মাংস খাওয়া হয় মাত্র ২০০ গ্রাম। এখনও বহু পরিবার সপ্তাহে বা মাসে একদিন মাংস খায়। দৈনিক প্রায় ৬ কোটি ডিম উৎপাদন হলেও তা দিয়ে পুরো চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তবে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম আমাদের পুষ্টির প্রধান উৎস। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।
নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকে একসঙ্গে সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়ারেছ আনসারী এবং ঢাকা মেট্রোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেনহাজুল হক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নওশাবা ইসলাম।
এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে উপদেষ্টা কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন এবং নবনির্মিত ছয়তলা ভবনের উদ্বোধন করেন।
ইএইচ