বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ

পূর্ব রেকর্ড ভাঙ্গার প্রস্তুতি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৯:৩৩ পিএম
  • বরিশালের সঙ্গে সারাদেশের পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
  • বাবুর্চি নিয়েই যাত্রা, মাঠেই রান্না- খাওয়া-দাওয়া
  • বরিশালে বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশির অভিযোগ 
  • বরিশালের রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য;বিএনপি নেতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত
  • তাবলীগ স্টাইলে দলবদ্ধ হয়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে অবস্থান
  • এক মাঠেই  বিএনপি-প্রশাসনের মঞ্চ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাত পোহালেই বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বরিশালের সঙ্গে সারাদেশের পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বরিশালে পৌঁছে গেছেন। শুক্রবার রাত সোয়া আটটায় বিমানযোগে বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্যরা বরিশালে এসে পৌছান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ি কমিটির সদস্য মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজন এক সাথে এসে পৌঁছান বলে আমার সংবাদকে জানান বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। এর আগে সড়কে সড়কে বাধা পেয়ে বিএনপির নেতারা বাবুর্চি নিয়েই যাত্রা শুরু করেন, শুক্রবার মাঠেই রান্না- খাওয়া-দাওয়া সারেন। তাবলীগ জামায়াত স্টাইলে দলবদ্ধ হয়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন অনেকে। ৫-৭ দিন আগে বরিশালে গিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বরিশালের ব্যবসা-বাণিজ্য রমরমা বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে একমাঠেই  বিএনপি-প্রশাসনের কর্মসূচী ঘিরে উত্তেজনাো রয়েছে। তবে পুরো মাঠে বিএনপির ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।

জানা গেছে, সর্ব প্রথম চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারলেও ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে কর্মসূচির পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়ে দলটি। বরিশালেও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সপ্তাহ পূর্বেই ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। একই সময় তিন চাকার যানেরও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সর্বশেষ লঞ্চ স্পিডবোট বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে। এমনকি খেয়া পারাপারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও বিএনপির টার্গেট বরিশালে রেকর্ড গড়ার।

এরআগের চারটি বিভাগীয় গণসমাবেশের পূর্বে নানান প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় বিএনপিকে। সেই প্রতিবন্ধকতার কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বরিশালে পৌঁছেছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। এত প্রতিবন্ধকতার বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভাগীয় বাকি সমাবেশগুলোতে বাধা দিয়েও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে সমাবেশ সম্পূর্ণ করেছে বিএনপি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাধার মুখে যে পরিমাণ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হয়েছে, বিএনপি নেতারা বলছেন, বরিশালের তার চেয়ে বেশি হবে। এরমধ্য দিয়ে বরিশালে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি।

বিএনপি নেতাদের দাবি, বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে যাতে মানুষ আসতে না পারে সেজন্য ৪ ও ৫ নভেম্বর সড়ক পথের সব ধরনের গাড়ি বন্ধ রাখতে সরকারের নির্দেশে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যে সকল হোটেলে অবস্থান নিয়েছে সেখান থেকে বের করে দেওয়ার হচ্ছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি পুলিশ তল্লাশি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন বলেও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। তবে যে কোনো মূল্যে গণসমাবেশ সফলের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। তারা বলছেন, এতকিছুর পরেও সমাবেশে জনতার ঢল নামবে।

জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া মহানগরীর মধ্যে নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ স্থলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এখানে তারা বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিচ্ছেন। তাদের খাওয়া দাওয়ার জন্য মাঠের মধ্যেই রান্নার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ধর্মঘটের বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তবে তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। সব বাধা অতিক্রম করে দুই দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখানেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বরিশাল পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউছার হোসেন শিপন বলেন, ‘মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলবন্ধের দাবিতে তারা আগে থেকেই ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মানুষ বিষয়টি আগে থেকেই জানতো।’

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, আন্দোলন এখন এমন একটি পর্যায়ে গিয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গ্যাস বিদ্যুতের জন্য মানুষ দিশেহারা। সাধারণ মানুষ এখন অসহায় তারা আওয়ামী লীগের লুটপাট, অত্যাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই অবৈধ সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেটার প্রতিফলন ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ কোনো বাঁধায় কাজ হবে না।

গাড়ি লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়াতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, প্রভাব পড়ার জন্যই তো এত অপচেষ্টা, আমরা ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল করব।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী বরিশালে চলে এসেছে। মাঠের মধ্যে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া মিছিল এভাবেই চলছে। পাকিস্তানও মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল কিছু বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ যে লক্ষ্য সেটা এ সরকার গায়েব করে দিয়েছে। এ সরকার থেকে সেটা ফিরিয়ে আনার জন্যই তাদেরকে সরে যাওয়া দরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ময়মনসিংহ, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে বরিশালেও তার ব্যতিক্রম নয়। গাড়ি বন্ধ করার পরেও সমাবেশ তো আটকে থাকেনি। পূর্বের সমাবেশগুলো সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে সফল করেছি বরিশালেও সফল করব।

বাবুর্চি নিয়েই যাত্রা, মাঠেই রান্না- খাওয়া-দাওয়া : শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশকে ঘিরে দুদিন পূর্বেই আগত নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশে রান্না করে সেখানে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। সবার মাঝেই দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের প্রায় প্রতিটি স্থানেই দেখা গেছে চাল ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে তার পাশে প্যান্ডেলে বসেই খাওয়া সারছেন। পুরো মাঠ ঘুরেই দেখা গেছে জায়গায় জায়গায় চলছে খিচুড়ির আয়োজন।বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা রান্নার সরঞ্জাম ও বাবুর্চি নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার আনছেন।

বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা থেকে ৫০০ নেতাকর্মী এসেছি। তাদের সবার জন্যই দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দুই দিনের রান্না করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. স্বপন হাওলাদার বলেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় দুই দিন আগেই ইউনিয়নের সব নেতাকর্মীর নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়েছি। এখন সবার জন্য চলছে রান্নার কাজ। জুমার নামাজ শেষে সবাই মাঠে বসেই খাওয়া দাওয়া করেছি।

বরগুনা জেলা যুবদলের সাহিত্য প্রকাশনী সম্পাদক রনি আহমেদ নাসির বলেন, একসঙ্গে অনেক নেতাকর্মী পাশাপাশি বসে খাওয়া দাওয়া, এ যেন এক উৎসব আয়োজন। প্রখর রোদে গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সমাবেশ সফল করতে সব কিছু মেনে নিতে রাজি।এ ছাড়া সমাবেশ স্থলে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করতে মাঠের চারপাশে গাছতলা, তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিয়ে যে যার মতো করে সাধ্য অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া করছেন।

রমরমা বরিশালের ব্যবসা-বাণিজ্য; বিএনপি নেতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত: কেউ প্রথমবার এসেছেন বরিশাল শহরে, কেউ অনেক দিন পর। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রমরমা বরিশালের ব্যবসা-বাণিজ্য। হাজারো মানুষ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেনাকাটা করছেন। হঠাৎ এমন ক্রেতার চাপ বাড়ায় ব্যবসায়ীরাও খুশি। অন্যদিকে সমাবেশ ঘিরে ব্যানার, ফেস্টুনের ব্যবসাও পেয়েছে নতুন মাত্রা। শহরের কেডিসি এলাকায় তেঁতুলতলা নামে একটা খাবার হোটেল আছে। বরিশালের মানুষ ঘরোয়া এবং ভালো মানের খাবার হিসেবে চেনেন এটাকে। ইলিশ, গরু ভুনা, ভর্তার জন্য বেশ পরিচিতি আছে। বিএনপির শনিবারের সমাবেশস্থলের কাছেই হোটেলটির অবস্থান বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্ব। 

শুক্রবার দুপুরে সেখানে দেখা গেল বসার জায়গা নেই। বাইরেও দাঁড়িয়ে আছেন অনেকেই। কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল, প্রায় সবাইই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য এসেছেন। যারা মাঠে রান্না করে খেতে পারেননি তারাই আশপাশের হোটেলগুলোতে ঢুঁ মারছেন।তেঁতুলতলা হোটেলের মালিকের ছেলে ও ম্যানেজার রুবেল হোসেন জানালেন, বেচাকেনা ভালোই অইতে আছে। দুই দিন ধইরা অনেক মানুষ আসতে আছে। খাওন দিয়ে কুলাইতে পারতে আছি না। পাশের হোটেলগুলোতেও প্রচুর ভিড়। অনেকেই বাইরে অপেক্ষা করছেন ভেতরে ঢোকার জন্য। নগরীর চকবাজার এলাকায় ঘরোয়া হোটেল কাকলীর মোড়ে রোজ ভিউ, সদর রোডের হোটেলগুলোতে একই অবস্থা। গির্জা মহল্লার ফুটপাতের দোকানগুলোতে গতকাল থেকেই বেচাকেনা বেড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে চশমা, গরম কাপড়ের দোকানে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষের চাপ। কেউ নতুন সানগ্লাস কিনছেন, কেউ ফুল হাতা টি শার্ট। কেউ নতুন জুতা।ভান্ডারিয়া যুবদলের কর্মী শাওন জানালেন, তিন বছর পরে শহরে এসেছেন তিনি। তাই কিছু কেনাকাটা করে নিচ্ছেন। শাওন বলেন, ‘বোজেনই তো ভাই, বিরোধী রাজনীতি করি। পুলিশে দাবড়ায়। সমাবেশে আইয়া মনে অইলো একটা জুতা কিনি।’

তাবলীগ স্টাইলে দলবদ্ধ হয়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে অবস্থান: সড়ক ও নৌ-পরিবহনের ধর্মঘট উপেক্ষা করে হেঁটে সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শুক্রবার ৪ নভেম্বর এভাবেই অনেকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ প্রবেশদ্বারে এসে পৌঁছেছে আগামীকাল শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে।সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে কোনো রুটের লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করেনি। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাসসহ যান্ত্রিক থ্রি-হুইলার চলাচল। বাউফল থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যানে করে দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু এখন রূপাতলী থেকে হেঁটে বেলস পার্ক যাচ্ছি। সব বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছি।নলছিটি থেকে আসা বিএনপিকর্মী হারুন বলেন, রাতভর আমাদের উপজেলার নদীতে ট্রলারে করে নেতাকর্মী এসে নেমেছে। এখন তাবলীগে জামায়াতের স্টাইলে দলবদ্ধ হয়ে হেঁটে বরিশাল এসেছি।

এক মাঠেই  বিএনপি-প্রশাসনের মঞ্চ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে: নগরের  বান্দরোডস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে একসঙ্গে চলছে বিএনপি ও প্রশাসনের পৃথক দুটি কর্মসূচির জন্য মাঠ গোছানো, মঞ্চ তৈরি ও প্যান্ডেল সাজানোর কাজ। উদ্যানের পূর্বপ্রান্তে স্থায়ী মঞ্চ ধরে চলছে স্থানীয় প্রশাসনের প্যান্ডেল তৈরির কাজ। এর বেশ খানিকটা দূরে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে চলছে বিএনপির বিভাগীয় মহা সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। মাঠের দুটি জায়গায়ই বালু ফেরার কাজও করছেন শ্রমিকরা। শুক্রবার  সকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। যেখানে প্যান্ডেল করা হচ্ছে সেখানে দায়িত্বশীল কেউ নেই।তাই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠে আগামী ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাই বালু ফেলে মাঠ ঠিক করা হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেলের কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে বরিশালের ১৬টি সেতু রয়েছে।ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূলমঞ্চ ঘিরে চলছে তার প্রস্তুতি।

শনিবার (৫ নভেম্বর) আবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ। আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাঠের পুরো অংশ বিএনপি ব্যবহার করতে পারছে না। যে কারণে মাঠের স্থায়ী মঞ্চ না পেয়ে পশ্চিম উত্তর প্রান্তে কাঠ-বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করছে দলটি। গণ সমাবেশের আয়োজন সম্পর্কে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, গত সোমবার আমাদের বেলস পার্কের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।মাঠের একাংশে তাদের একটি মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে আমাদের জনসভা করতে হবে। 

স্থায়ী মঞ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যতটুকু অংশ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের জনসমুদ্রের অর্ধেকও সংকুলান হবে না।জেলা প্রশাসন ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠান হলেও গোটা বঙ্গবন্ধু উদ্যান বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। উদ্যানের স্থায়ী সভামঞ্চ ঘিরে নেতাকর্মীদের পোস্টার লাগানো হয়েছে।


এআর/ইএফ