৯০ শতাংশ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান: কর্নেল অলি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ১২:১৩ পিএম

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ডক্টর কর্নেল অলি আহমদ বলেছেন, বিগত ৬ মাস পূর্বে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে এবং ভয়ে মানুষ চুপচাপ ঘরে বসে ছিল। কিন্তু বিগত ২ মাস যাবৎ প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং অমানবিক কষ্ট সহ্য করে, ভয়কে জয় করে, নিজের পয়সা খরচ করে, স্বউদ্যোগে জীবনের মায়া ত্যাগ করে, বিএনপি‍‍`র জনসভাগুলিতে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে, যা অকল্পনীয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বেলা এগারোটায় বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থির পরিস্থিতিতে করণীয় শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে পূর্ব পান্থপথ দলীয় কার্যালয় তিনি এ কথা বলেন।

কর্নেল অলি বলেন, বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বর্তমান নিশিরাতের বিনা ভোটে, প্রশাসন দ্বারা নির্বাচিত অবৈধ সরকারের- সীমাহীন অদক্ষতা, লাগামহীন দুর্নীতি, জবাবদিহিহীনতা, সুশাসনের অভাব, মানবাধিকার লংঘন, সর্বত্র দলীয়করণ, বিচারহীনতা, এক দলীয় শাসন, খুন, গুমসহ সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসকরণ এবং নিত্য পণ্যের দ্রব্য মূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি এবং সর্বোপরি বেকার সমস্যার কারণে সরকার ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিরোধী দলগুলি সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুসরণ করেও সরকারের অনুমতি ব্যতীরেকে জনসভা বা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে না। অথচ আওয়ামীলীগ পুলিশি প্রহরায়, যখন ইচ্ছা যত্রতত্র জনসভা এবং সমাবেশ করে যাচ্ছে।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, সরকার বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সাথে সরকার দলীয় অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী ক্যাডারেরা প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করে, বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় কর্মকাণ্ডগুলিকে বানচাল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি‍‍`র ৭-৮ জন নেতাকে রাজনৈতিক কারণে হত্যা করেছে। কয়েকশত নতুন মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানী করার জন্য আসামী করা হয়েছে। পুলিশের নির্যাতনের কারণে অনেকে নিজ গৃহে ঘুমাতে পারে না। কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ এবং তাদের নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য, অবৈধ সরকারকে নগ্নভাবে অবৈধ কর্মকান্ডে সাহায্য করে যাচ্ছে। সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।

হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যে বা যারা অতীতে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তাদের কিন্তু শেষ পরিণতি সুখকর হয়নি। সরকার তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে। আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হয় খুব দ্রুত অর্থনৈতিক ধ্বংস এবং সংঘাতের দিকে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। তাদের পক্ষে বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা নাই এবং অন্যদিকে রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হবে কিনা জানিনা ।

কর্ণেল অলির চোখে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয়

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)সভাপতি ডক্টর কর্নেল অলি আহমদ এর চোখে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় তিনি আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তা তুলে ধরেছেন।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল উৎস: তৈরী পোশাক শিল্প। যা বর্তমানে সংকটাপন্ন।(ক) ইতিমধ্যে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং বন্ধ হওয়া অব্যাহত আছে।(খ) এলসি বন্ধ থাকায় কাঁচামাল আমদানী বন্ধ ।(গ) জয়াদেশ অনেকাংশে স্থগিত করা হয়েছে।(খ) শ্রমিক ছাটাই ক্রমাগত চলছে- ফলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রবাসী রেমিটেন্স- আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে।

(ক) ডলার সংকটের কারণে খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।(খ) সার, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কেরসিন, কীটনাশক ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে। এছাড়াও এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সমাজের বিভিন্ন স্তরে পড়বে।(গ) দেশে আমদানীকৃত মালামালের মূল্য ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরণের মালামালের আমদানী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।(ঘ) অন্যদিকে রপ্তানিও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে। (ঙ) প্রতিদিন নিত্য পণ্যের মূল্য হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন সংগতি নাই। কারণ প্রায় সকলের আয় ব্যয়ের অর্ধেক। এছাড়াও বেকার সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। (চ) বিদেশে টাকা পাচার অব্যাহত রয়েছে। অনেক সরকারী কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। (ছ) বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দৃশ্যত কোন উদ্যোগ নাই। কারণ এর সাথে সরকার দলীয় রাজনীতিবিদ এবং সরকারী সমর্থক কর্মকর্তারা জড়িত।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূল অন্যান্য কারণগুলি : যেমন-
(ক) গত ১২ বৎসর যাবৎ গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখার জন্য নিশি রাতের সরকার উল্লেখযোগ্য তেমন কোন প্রকল্প হাতে নেয়। নাই। বর্তমানে মেগা প্রকল্পের সংখ্যা ২০টি। যা ১৮ কোটি মানুষ এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দায়ী বলা যায়। (খ) বর্তমানে সরকারের ঋণ ১৪০ বিলিয়ন ডলার। যা আগামী ৫ মাস পর থেকে পরিশোধ আরম্ভ হবে। এছাড়াও বিভিন্নপ্রকল্পে উৎপাদন ব্যাতীত বিরাট অংকের সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। যেমন- কয়েক মাস পর থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুদ বাবদ ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। সরকার সমর্থিত কুইক রেন্টাল প্যান্টের জন্য উৎপাদন ব্যাতীত প্রতিমাসে কয়েকশত মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়। (গ) শুধুমাত্র মেঘা প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৭০ বিলিয়ন ডলার।(ঘ) ডলারের অভাবে নিয়মিত আমদানী রপ্তানী ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ভারত থেকে নাচ গান করার জন্য ডলার খরচ করে মুরা ফতেকে আনা হয়েছে।(ও) রাশিয়া, চীন এবং জাপান থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে ৪৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পেরঅহেতুক সময় বৃদ্ধি, অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে ক্রমাগতভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। (চ) শুধুমাত্র আমদানীর জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে। (ছ) এছাড়াও ২০২৩ এবং ২০২৪ সাল হতে ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। অথচ রিজার্ভে এই টাকার কোন সংস্থান নাই। (জ) সরকারী অফিসসমূহে ঘুষ ব্যাতীত কোন কাজ সম্পাদন সম্ভব নয়। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। সর্বোপরি মন্যুষত্ব বিলোপ পেয়েছে। অর্ধমীদের কাজ থেকে ভাল কিছু আশা করাটা বোকামী।

দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের কারণে সমাজের অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে বর্তমান সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। দেশ বিদেশের কেউ এই সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারেছে না। সুতরাং কোন অবস্থাতেই বর্তমান সরকারের পক্ষে এই সংকট থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিনা ভোটে নির্বাচিত নিশি রাতের সরকারের পক্ষে বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা নাই। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, বৈধ/অবৈধ পন্থায় জোর জবরদস্তি করে ১৪ বৎসর দেশ শাসন করেছেন, আজ আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যুব সমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দয়া করে এখন ক্ষান্ত হন, প্রতিশোধের রাজনীতি চিরদিনের জন্য পরিহার করে সকল প্রকার ক্ষমতার লোভ লালসা পরিহার করে, মন্যুষত্বের খাতিরে এবং সর্বোপরি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যতদ্রুত সম্ভব সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিষ্ঠাবান এবং দেশের মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত একটি জাতীয় সরকারের কাছে স্বসম্মানে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রস্তান করুন। এটাই হবে রাজনৈতিক পরিপক্কতা এবং বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখতে হবে, দেওয়ালে মাথা ঠুকলে দেওয়াল ফাটে না, ফাটে যাথা।


ইএফ