আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিকদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে : কাদের

ঢাবি প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম

জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

রোববার (২ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র মিলনায়তনে (টিএসসি) ঢাবি ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও গ্রন্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সংবাদ পত্রের স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, জিয়াউর রহমান খুনী ফারুক-রসিদদের বলেছিলেন, তোমরা এগিয়ে যাও আমি সাথে আছি। এই জিয়া হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পরেই ডালিমের সাথে দেখা করে বলেছিলেন, মেজর ডালিম ‍‍`ইউ আর ডুয়িং এ গুড জব‍‍`। হত্যাকারীদের নিরাপদে বিদেশ গমন, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে সম্মানিত করেছিলো জিয়া। বিএনপি দাবি করে জিয়া নাকি মুক্তিযোদ্ধা।বআমার কথা বলো, একজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সাহায্য করেতে পারে? খুনীদের বিদেশে পালাতে সাহায্য করে? বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুকে রেখে বিজয় উৎযাপন করতে পারে? কিভাবে ৭ মার্চকে নিষিদ্ধ করতে পারে? কিভাবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসাকে নিষিদ্ধ করে? সেই পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছিলো ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। সেই সময় জিয়া যদি ঘাতকদের সহায়তা বা অনুপ্রাণিত না করতো, তাহলে ঘাতকদের সাহস হতো না বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে হত্যা করার।

তিনি বলেন, এই বাংলার মাটিতে অসংখ্য কৃষক বিপ্লব হয়েছে। ১৯৫৭ সালের পলাশীতে সেনাপতিদের বিশ্বাসঘাতকিতার ফলে ৪৫ হাজার সেনাবাহিনীর অধিপতি সিরাজদৌলার সাড়ে তিন হাজার সৈন্যের ক্লাইভের হাতে পরাজিত হয়েছিলেন। একদিকে নুরুলদীন কৃষকদের সংগঠিত করেছেন অপরদিকে চট্টগ্রামে মাস্টার দ্যা সূর্যসেন  মানুষকে সংগঠিত করেছেন, প্রিতীলতা আত্মত্যাগ করেছেন কিন্তু স্বাধীনতার এই সুতীব্র বাসনা মানুষের পূর্ণ হয়নি। বাংলা যেমন একাধারে সংগ্রামের ইতিহাস অপরদিকে বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। পলাশীর সেই বিশ্বাসঘাতকতার পরে ১০০ বছর এদেশে কোন স্বাধীনতার পতাকা কেউ উত্তোলনের সাহস করেনি। ১০০ বছর পরে সিপাহী বিপ্লব সংগঠিত হলেও স্বাধীনতা মানুষের কাছে ধরা দেয়নি। নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‍‍`তোমরা রক্ত দাও আমি স্বাধীনতা দিবো‍‍`, স্বাধীনতা তবুও আসেনি। বৃটিশ শাসনের ২০০ শত বছর পরে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিলো স্বাধীনতার পতাকা বাংলার মাটিতে উত্তোলনের জন্য। ইতিহাসের প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি আবার তিনিই একটি ইতিহাসের নির্মাতা।

তিনি আরও বলেন, এদেশে ১৫ আগস্ট আছে, জেল হত্যা আছে, ২১ আগস্টের ২৩ টি প্রাণের হত্যা আছে, যার মাস্টারমাইন্ড ছিলো খালেদা জিয়া পুত্র তারেক রহমান। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে বঙ্গভবনে দাওয়াত করেছিলেন, তিনি আসেননি বরং প্রধানমন্ত্রীকে গালাগালি করেছিলেন। খালেদা জিয়ার পুত্র কোকো যখন মারা যায় শেখ হাসিনা দেখতে গিয়েছিল, কিন্তু দেখা করতে দেয়া হয়নি। যেখানে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করেছে বহুবার সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখিয়েছেন বারবার।

প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ও এক শ্রেণির মানুষের বিরোধীতা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্লুমবার্গের মতো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের দিক তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনাকে ৪র্থ বারের প্রধানমন্ত্রী বলে মনে করা হয়। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ এর একটি বিল উঠেছে শেখ হাসিনার উন্নয়নের অংশ হিসেবে। এ নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদেও আলোচনা করা হয়েছে।  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অর্জন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাছে মডেল। সেখানে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর গণমাধ্যম সরকারের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় সরকারের নামে সমালোচনা, অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাষায় সরকার বিরোধী কথা লেখা হচ্ছে। তারা উন্নয়নের প্রশংসা তো করেই না আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করে।

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেফতার ও আইসিটি অ্যাক্টের বিষয়ে তিনি বলেন, শিশুদের দিয়ে, তাদের টাকা দিয়ে লোভ দেখিয়ে এমন মন্তব্য করানোর পরেও প্রথম আলোর লাইসেন্স ঠিক রয়েছে এটাই শেখ হাসিনার নমনীয়তা। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে চাইল্ড এক্সপ্লোয়টেশন হলে সাথে সাথেই ঐ সংবাদপত্রের লাইসেন্স চলে যেতো। শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করানোটা ভুল নয়, এটা চরম পর্যায়ের অপরাধ। এর কি বিচার হবে না? একটা শিশুকে বাধ্য করে নেয়া বক্তব্যকে দিনমজুরের কথা বলে চালিয়ে দেয়ার শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। স্বাধীনতা দিবসে এমন মন্তব্য করা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করার সমতুল্য। স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা এবং বাংলাদেশকে কটাক্ষ করা দুটোই সমান।

আজকের দিনগুলোতে অনলাইন মাধ্যমে তো যে যেমন পারছে ইচ্ছেমতো সরকারকে গালাগালি করেই যাচ্ছে, সেগুলো দেখার কেউ নেই। এসবের বিচার করতেই আমরা এই আইসিটি অ্যাক্টের আইন তৈরী করেছি। একসময় সাংবাদিকদের অটোক্রেসি ছিলো, আমরা এই আইনের মাধ্যমে সেটা ডেমোক্রেসিতে রূপান্তর করেছি। এদেশে অসংখ্য সাংবাদিক হত্যার মূলহোতা এই বিএনপি কিন্তু আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রেখেছি।

তিনি মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আজ হতাশ। আজ গণ অভ্যুত্থান পথ হারিয়ে চলে গেলো গাবতলীর গোপালবাগের গরুর হাটে, এরপর রূপ নিলো নিরব পদযাত্রায়, একসময় সেটা হলো মানববন্ধন, কিন্তু মানববন্ধনও তারা করছে বসে বসে। তাদের গণ অভ্যুত্থানও এখন বসে গেছে আর দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। আন্দোলন তো না, এটা যেনো রোজার দিনে রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া। অথচ তিনি (মির্জা ফখরুল) তিনি হুংকার ছুড়েছেন গণ অভ্যুত্থানের কিন্তু গতকালের বিএনপির সমাবেশে ৫০০-৭০০ লোকের উপস্থিতি ছিলো। এই গুটিকয়েক নেতা-কর্মীদের নিয়ে নাকি তিনি গণ অভ্যুত্থান করবেন। দেখতে দেখতেই ১৪ বছর কেটে গেলো, আন্দোলনের ঢেউই তো দেখা গেলো না তারা নাকি গণ অভ্যুত্থান করবে। জনগণ বিহীন  নেতাকর্মীদের আন্দোলন গণ অভ্যুত্থান হয় না।

ফখরুল বলছেন, আগামী ইলেকশনে সরকার কৌশল করে আগাম নির্বাচন দিচ্ছে। আমাদের কথা হলো, নির্বাচন তো দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন, তারাই শিডিউল স্থির করছে এখানে সরকারের তো কিছু করার নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরাও জানে এই স্বাক্ষী গোপাল দিয়ে আর তাদের আন্দোলন দাঁড়াবে না। সেই ৫ম সংশোধনীর সেই ইনডেমনিটি বিলকে আইনের স্বকৃতি দিয়েছিলেন জিয়া। তিনি যদি বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার সাথে জড়িত না-ই থাকতেন তাহলে কেন সেই ইনডেমনিটিকে আইনে পরিণত করেছিলেন? আমি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে অসংখ্যবার প্রশ্ন করেছি, তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি। পরিশেষে তিনি ঢাবি ছাত্রলীগের এমন মহতী উদ্যোগের ভূঁয়সী প্রশংসা করে এমন কাজ চলমান রাখার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের জন্মদিন উপলক্ষে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান কিন্তু তার আগে ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশ ত্যাগের ব্যবস্থা করেন তিনি, যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সংবাদমাধ্যম তাঁর পরিকল্পনা নষ্ট করার জন্য ভুয়া খবর ছাপায়।  এখনও সেই ধারা অব্যাহত রেখে তাঁরা ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনের সময় ফটোশপ করে এডিট করে টিপ, সিঁদুর পরিয়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে। এখন তারা দশ টাকা দিয়ে ভুয়া খবর তৈরী করে প্রকাশ করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশকে ঢেলে সাজানোর জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।  তিনি বাকশালের স্বপ্ন দেখেছিলেন। গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সমবায়ের মাধ্যমে উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। হাসিনার ইকোনমিকস মডেল হাসিনোমিক্স আজকে শেখ হাসিনার ইকোনমি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয়। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। তার ইকোনমিক মডেলকে বলা হয় ‍‍`হাসিনোমিকস‍‍`।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই থেকে আমরা দেখি তিনি নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন, মুজিব ভাইয়ের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ছোট্ট বয়সে যখন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা নিয়ে রুটিন গোছানোতে মনোযোগী তখন তিনি বিখ্যাত পত্রিকাগুলোতে চোখ বুলাতেন। যেই সময়ে কিশোররা খেলাধুলায়, আড্ডায় মেতে থাকতো সেখানে তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করতেন। একজন শিশু কিশোরের স্বপ্ন থাকে পাড়া মহল্লায় সেরা হওয়া, বড় ভাইদের সহাচার্য পাওয়া সেখানে বঙ্গবন্ধু শৈশবে বা কৈশোরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সান্নিধ্য পাবার চেষ্টা করেছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‍‍`মুসলিম সেরা ধর্ম‍‍` নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে সেটাকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টা করেছেন। আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের আদর্শের শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করি, তার শৈশবের দূরন্তপনাকে মনে লালল করি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, জিন্নাহ যখন বলেছিলো উর্দূ রাষ্ট্রভাষা হবে সেটাই একসময় জনমানুষের সম্মিলিত ‍‍`না‍‍` হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু যখন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, সবাই মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেলেও বঙ্গবন্ধু মুলাচেকা দেননি। তিনি ছিলেন তার কাজে অনড়। ফলে তাকে বহিস্কৃত হতে হয়েছিলো। জাতিসংঘ যখন শিশুদের নিয়ে ভাবা শুরু করেনি তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন। ফলে আমরা ১৭ মার্চকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করি। তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত মেয়েদের বেতন বিহীন পড়ার চিন্তা করেছিলেন, যা শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভার সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগ, সাত কলেজের ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএস