সারজিস আলম

সাম্য হত্যায় সিন্ডিকেট দায়ী, ভিসি-প্রক্টর নয়

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আলোচিত সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে আজ সকালে একটি বিস্তারিত পোস্ট দিয়েছেন। তিনি এই হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলমান দোষারোপের প্রবণতাকে ‘সত্য আড়াল করার অপচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।

সারজিস আলম লিখেছেন, ‘আমাদের ভাই সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে এবং তাদের উপরে দায় চাপানোর যে চেষ্টা করা হয়েছে সেটা স্রেফ অপচেষ্টা এবং সত্যকে আড়াল করার পায়তারা।’

তিনি বলেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে, যেটির শৃঙ্খলার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নয়। বরং উদ্যানজুড়ে মাদক, হেনস্থা, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপকর্ম পরিচালিত হয় ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সংগঠন ও সিন্ডিকেটের দ্বারা।

সারজিস আরও বলেন, ‘উদ্যানের গেট এবং ভিতরের অংশে ভাসমান দোকান দিয়ে বস্তি বানানো হয়েছে, যেগুলো বসিয়েছে প্রশাসন নয় বরং কিছু চাঁদাবাজ নেতাকর্মী। তারা চাঁদা তোলে এবং প্রটেকশন দেয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অনেক সময় এই সিন্ডিকেটে মিলে যায়।’

তিনি দাবি করেন, প্রশাসন ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয়। উদ্যানের গেট খুলে যারা দোকান বসিয়েছে, তারা এই হত্যার পরিবেশ তৈরিতে দায়ী।

মেট্রোরেল স্টেশন ও শহীদ মিনার কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দোকান ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এরা এমন হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে দায়ী। যারা মাদক সরবরাহ করে এবং চাঁদা তোলে, তারাও পরোক্ষভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় বহন করে।’

টিএসসি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কখনো শহরের মানুষের চা-সিগারেট খাওয়ার বা আড্ডার স্থান হতে পারে না। অথচ এখানে প্রায় ৩০টি চা দোকান বসানো হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ক্যাফেটেরিয়াকে অকার্যকর করে তুলেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে গেলেই কিছু তথাকথিত উদারপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের চেতনা থেকে লাভা নির্গত হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সারজিস আলম দোয়েল চত্বর ঘিরে গড়ে ওঠা গাছ ও কারুকাজ পণ্যের দোকানগুলোকেও বহিরাগতদের আনাগোনার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, এগুলো থেকে চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।

পোস্টের শেষাংশে তিনি কড়া ভাষায় বলেন, আমার ভাইয়ের গায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতও আমরা প্রত্যাশা করি না। অথচ নিজেরা মাদক চালাবো, দোকান বসাবো, বহিরাগত আনবো আর কিছু হলে ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চাইবো এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।

সারজিস আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান-ক্যাম্পাসের সব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করতে হবে,টিএসসির চা দোকান বন্ধ করে ক্যাফেটেরিয়া সচল করতে হবে,কার্জন হল, মোকারম ভবন, মোতাহার ভবনে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে হবে,অবাধ যান চলাচল ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সবশেষে তিনি লেখেন, ‘আমাদের ভাই সাম্যের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাম্যের মতো আর কোনো ভাইকে যেন হারাতে না হয়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই।’

বিআরইউ