নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা রূপ নেয় এক শোকাবহ বিদায় মঞ্চে। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) এম আনোয়ারুল আজিমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন দলটির শীর্ষ নেতা, অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীসহ তারা সমর্থকেরা।
দুপুর ১২টা থেকে ১২টা ১০ মিনিট, মাত্র ১০ মিনিটের এই জানাজা যেন ধারণ করে নেয় প্রয়াত এই নেতার রাজনৈতিক জীবনের সম্মান ও শোকের গভীরতা। সড়কের দু’পাশে দলীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে পড়েন নিস্তব্ধভাবে, অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কুমিল্লা বিভাগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, জাতীয়তাবাদী তাঁতীদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ আরও অনেকে।
শনিবার ভোররাতে রাজধানীর বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে রেখে গেছেন।
জীবনের পথে: সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতি
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার শরিফপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া আনোয়ারুল আজিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। অবসরের পর তিনি বিএনপিতে সক্রিয় হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে কুমিল্লা–৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি দলের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় ও সাহসী সংগঠক হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
একদিনেই পাঁচ জানাজা
বিএনপির এই প্রবীণ নেতার জানাজার জন্য পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ শনিবার মোট পাঁচটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায়, মহাখালী নিউ ডিওএইচএস মসজিদে, যেখানে আত্মীয়স্বজন ও নিকট বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় জানাজা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, দুপুর ১২টায়—রাজনৈতিক শ্রদ্ধার কেন্দ্রীয় পর্ব।
তৃতীয় জানাজা লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, আসরের নামাজের পর—এলাকাবাসী শ্রদ্ধা জানানোর স্থান।
চতুর্থ জানাজা মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে,মাগরিবের পর—দীর্ঘ রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রের আরেক প্রাণকেন্দ্রে।
পঞ্চম ও শেষ জানাজা মরহুমের নিজ গ্রাম শরিফপুরে, এশার নামাজের পর। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
দল একজন অভিভাবককে হারালো
নয়াপল্টনের জানাজায় নেতারা বলেন, তিনি ছিলেন সৎ, নির্ভীক ও ত্যাগী একজন নেতা। আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে সব সময় সামনে পাওয়া যেত। দল আজ একজন অভিভাবকসুলভ নেতাকে হারালো, যার অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
আরএস