গত ১৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের অনেক ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৃহস্পতিবারএকটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তার শ্যালক ও ঘনিষ্ঠজন ডা. আনম নওশাদ খান।
সাক্ষাৎকারে ডা. নওশাদ বলেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রায়ই বলেন, গত ১৬ বছরে আমাদের (আওয়ামী লীগ) অনেক ভুল ছিল। তা না হলে এমনটা কেন হলো? ভুল ছিল বলেই আজকের এই পরিণতি। এই অবস্থা আমাদের ভুলেরই শাস্তি।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। দলের প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের কেউ পলাতক, কেউ বা কারাগারে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার চলছে। বর্তমানে দলটি নিষিদ্ধ, এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও স্থগিত রয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ এই স্বজন জানান, আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থায় ভীষণ আক্ষেপ করেন এবং প্রায়ই বলেন, “২০১২ সালে যখন স্পিকার ছিলাম, তখনই বলেছিলাম, সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বেশিদিন সায় দেবে না।”
নওশাদ আরও জানান, রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন। অনেক বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও সরাসরি মতামত দিতেন, যা অনেকের অপছন্দ হতো। তার ভাষায়, “আমিই একমাত্র অনেক কথা বলতাম, এজন্য অনেকে আমাকে পছন্দ করত না।”
সাবেক রাষ্ট্রপতির বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে নওশাদ বলেন, “তিনি এখন অনেক দুর্বল। একা চলাফেরা করতে পারেন না, তাকে ধরে ধরে বাথরুমে নিতে হয়। এমনকি নামাজও পড়তে পারেন না। তিনি বলেন, ‘নামাজ-কালাম তো পড়ি নাই, আল্লাহই জানেন কী হয়।’”
তথ্যমতে, আবদুল হামিদের ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়েছে, যা ‘থ্রি-টু-ফোর’ স্টেজে রয়েছে। ডাক্তাররা পর্যবেক্ষণের জন্য তিন মাস সময় দিয়েছেন। তবে বিদেশে চিকিৎসার পরও তিনি দেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন। নিজের ভাষায়, “যা হওয়ার হবে। দেশে ফিরে দেশের মাটিতেই না হয় মারা গেলাম। এখানেই তো আত্মীয়স্বজন, আপনজন সবাই আছেন।”
৭ মে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রায় এক মাস পর ৯ জুন রাত ১টা ২৫ মিনিটে টিজি-৩৯৯ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর দেখাশোনা করছেন শ্যালক ডা. নওশাদ খান।
কিশোরগঞ্জের হাওড় এলাকার সন্তান আবদুল হামিদ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বঙ্গভবনে অবস্থানকালে নিজেকে ‘বন্দিজীবনে থাকা মানুষ’ বলেও উল্লেখ করতেন।
যদিও এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ, তবুও এলাকার খোঁজখবর নিয়মিত নেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। হাওড়ে যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও, শারীরিক অবস্থার কারণে সেটি আর সম্ভব নয় বলে জানান তার ঘনিষ্ঠজনেরা। —সূত্র: যুগান্তর
ইএইচ