মির্জা ফখরুল

নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গণতন্ত্রবিরোধী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “যারা নির্বাচন পেছাতে চায় তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়, বরং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনারও বিপরীতমুখী।”

রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “মানুষ চায় অবিলম্বে নির্বাচন। আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি- যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তারা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক শক্তি হতে পারে না, তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবেরও সমর্থক নয়।”

ফখরুল বলেন, “লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এবং তারেক রহমানের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়েছে, বিএনপি বিশ্বাস করে তার ভিত্তিতেই দেশে নির্বাচনের পথ তৈরি হবে।”

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপিকে ঘিরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি মহল মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।”

তার ভাষ্যে, “কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিএনপিকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জনগণের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে চায়। কিন্তু জনগণ এর প্রতি সাড়া দিচ্ছে না। দেশের মানুষ বিএনপিকে জানে। তারা জানে- বিএনপি কীভাবে এদেশে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের অধিকারের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।”

ফখরুল বলেন, “এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিএনপি একটি পরীক্ষিত উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়েই জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাই। বিপ্লব বা অন্য কোনো পন্থায় আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমাদের অবস্থান নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি।”

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কিছু গণমাধ্যম ও ব্যক্তি বিএনপির সংস্কারসংক্রান্ত অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। অথচ ২০১৬ সাল থেকেই বিএনপি সংস্কার নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’-এর মাধ্যমে প্রথম সংস্কারের কথা বলেন। এরপর আমরা ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব এবং পরবর্তীতে ৩১ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করি। সংস্কারের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা থেকে দেশজুড়ে অসংখ্য কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণ ও নাগরিক সমাজের সামনে আমরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছি। এরপরও একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার।”

ফখরুল বলেন, “এক দশকের বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াইয়ের মাধ্যমে বিএনপি শুধু টিকে থাকেনি, বরং আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে। শত শত শহিদের রক্ত, গুম-হত্যার শিকার সহকর্মীদের ত্যাগ আর লাখ লাখ নেতা-কর্মীর সীমাহীন কষ্ট—সব মিলিয়ে বিএনপির ঐক্য আজ আরও সুদৃঢ়।”

এই ঐক্য, জনগণের ব্যাপক সমর্থন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিয়েই বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা কর্তৃত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদের উত্থান রুখতে সক্রিয় রয়েছি। যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক অতিরিক্ত ক্ষমতা ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি করে, তেমনি নির্বাচিত সরকার ও সংসদের ক্ষমতা খর্ব করাও রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে।”

দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রক্ত দিয়ে কেনা এই পরিবর্তনের সুযোগকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে এ সময় সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, “চলুন, আমরা যেন ব্যর্থ না হই। মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনের চেতনায় একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব পালন করি।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদও বক্তব্য দেন।

ইএইচ