ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে তিন গুরুত্বপূর্ণ পদে একই ব্যক্তি—সমস্যা দেখছে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা চললেও একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখছে না বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বিএনপি মনে করে এতে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা উচিত নয়।

শনিবার (২০ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৫তম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “একই ব্যক্তি তিনটি পদে (প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান) থাকতে পারবেন কি না, এটা একটি দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা না রেখে সেটি উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। দলীয় প্রধান মানেই যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন—তা নয়। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা সংসদীয় দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় নির্ধারিত হবে।”

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ছিল—একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান—তিনটি পদে একযোগে থাকতে পারবেন না। তিনজন আলাদা ব্যক্তি এসব পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার দায়িত্ব একসঙ্গে পালন নিয়ে তেমন মতভেদ নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে দলীয় প্রধানও হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিএনপি এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে এবং আগের আলোচনায়ও একই যুক্তি উপস্থাপন করেছে।”

তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, “সেখানে দলের প্রধানই সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এটি সরাসরি নির্বাচন নয়—সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়। সে ব্যক্তি যদি কোনো দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় না।”

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের জন্য অপশন খোলা থাকা উচিত। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। পার্লামেন্টারি পার্টি যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন; আবার চাইলে অন্য কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারে। সেই সুযোগটা রাখা জরুরি।”

তিনি মনে করেন, “শুধু দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান গণতন্ত্রবিরোধী। এটা সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চার পরিপন্থী।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিএনপি আদালতের রায়ের ওপর আস্থা রাখছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদ চাইলে নতুন করে আইন প্রণয়ন করেও এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।”

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলেও বিষয়টি আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা আশা করি, আদালতের রায়ের মাধ্যমেই এই ব্যবস্থা আবার চালু হবে। আর যদি না-ও হয়, তাহলে জাতীয় সংসদ আইন করে তা চালু করতে পারে।”

আলোচনায় বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান তিনি। এই জায়গা থেকে কমিশন একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা নিয়ে দলগুলো নিজ নিজ পর্যায়ে আলোচনা করে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মতামত জমা দেবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন ও প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ প্রস্তাব

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রণালী নিয়ে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। কমিশন সেগুলোর ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। খসড়ায় সংশোধনী বা পর্যবেক্ষণ থাকলে দলগুলো তা জমা দিতে পারবে।

প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় হুইপ এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকতে পারেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “এই কমিটি বিভিন্ন দল ও জনগণের কাছ থেকে প্রস্তাবিত নাম আহ্বান করতে পারবে। এরপর শর্টলিস্ট করা হবে। প্রয়োজনে র‍্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে একজন নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আগের মতো ৯০ দিনই থাকবে। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর মতো হলেও তা রুটিন দায়িত্ব পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক প্রথা বিবেচনায় সবাই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং একটি যৌক্তিক অবস্থানে উপনীত হওয়া সম্ভব হবে।”