ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা, হাতিয়েছে কয়েক কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম

রাজধানীর উত্তরা থেকে ফেইসবুক পেইজে সিপিএ মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের আড়ালে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি প্রতারণা চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)‍‍`র সাইবার ক্রাইম উইং।

গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্য হলো- 
শামীম আহম্মেদ (৩২),  জাহিদুল ইসলাম (২৪), মাহিদুল হক ওরফে মাহাদী (৩০), মোঃ আশরাফুল ইসলাম (২৬),  এহসান মাশফী (২৪), রনি সরদার (২৮)।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি এসএসডি কার্ড, চারটি হার্ডডিস্ক, চারটি ট্যাব, একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইটিইউর মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ওয়াহিদা পারভীন।

তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের খুব জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট বা মার্কেট প্লেসে সাফল্যের সাথে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন অনেকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোর্স করানোর আড়ালে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান আপস্পট অ্যাকাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির ফেইসবুক পেইজে সিপিএ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে প্রথম দিন থেকে  ১০ থেকে ৪০ ডলার আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেওয়া হত। বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেওয়া হতো  ফেইক ভিডিও রিভিউ ও পোস্ট।

বিজ্ঞাপনে তারা প্রচার করে সিপিএ ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের জন্য তারা প্রতি গ্রুপে ৩০০ জন করে লোক নেবে এবং এই কোর্সটি অনলাইনে সম্পূর্ণ ফ্রিতে করাবে। এই বিজ্ঞাপনে কোর্সটি করার জন্য কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। রেজিস্ট্রেশন করার পর নির্ধারিত সময়ে তাদের পাঠানো জুম লিঙ্কের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হয়। ক্লাসে তারা অল্প সময়েই সিপিএ মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ইনকাম করার বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফারের বিষয়ে বলতে থাকে। পরবর্তীতে সিপিএ মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন প্রিমিয়াম রাশিয়ান সফটওয়্যার টুলস প্লাগইন করার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে চাওয়া হয় এবং এই টাকা পরিশোধ করলে তাদের ক্লাসে এনরোল করা হবে বলা হয়। আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থীরা বিকাশে ২৫০০ টাকা পরিশোধ করলে তাদের সিপিএ মার্কেটিং এর উপর দায়সারাভাবে কিছু রেকর্ডেড ও কিছু লাইভ ক্লাস করানো হয়। তাছাড়া যেসব প্রিমিয়াম টুলস এর কথা বলে তারা বিকাশে টাকা নেয় সেগুলো দেওয়া হয় না। প্রিমিয়াম সফটওয়্যার টুলস এর নামে তারা কিছু ফ্রি সফটওয়ার সরবরাহ করে, যা দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত আয় করতে সক্ষম হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু ভুক্তভোগী তাদের মাধ্যমে অনলাইনে কিছু ডলার আয় করতে পারলেও ওয়েবসাইট আপডেট এর কথা বলে অর্জিত ডলার কেটে রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী দুই বছরে আপস্পট অ্যাকাডেমি সিপিএ মার্কেটিং এর উপর এভাবে ১৫৬টি ব্যাচ এর ট্রেনিং প্রদান করেছে যার প্রতিটিতে প্রায় ৩০০ জন করে অংশগ্রহণকারী ছিল। এভাবে প্রতারণামূলকভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করলেও প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের দেওয়া প্রশিক্ষণ থেকে তেমন কিছুই আয় করতে পারেনি। তাছাড়া প্রিমিয়াম টুলস প্রদানের নামে ২৫০০ টাকার অফারের মাঝে কেউ প্রথমে পুরো টাকা না দিয়ে আংশিক পেমেন্ট করলে তাকে অনলাইন ক্লাস থেকে ব্লক করে দেওয়া হয় এবং সেই প্রদত্ত টাকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর ফেরত দেওয়া হওয়া না। এর মাধ্যমেও তারা হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

ভুক্তভোগীরা জানায়, কোর্স সমাপ্ত হওয়ার পর সিপিএ মার্কেটিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করার কথা থাকলেও আপস্পট অ্যাকাডেমি থেকে পরবর্তী সময়ে তারা কোন ধরনের সেবা পান না। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা মেসেজ বা হটলাইনে আপস্পট অ্যাকাডেমির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন ধরনের  সাড়া পায় না। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে ব্লক করে দেওয়া হয়।

অর্থাৎ ফ্রিলান্সিং এর কোর্স পরিচালনার আড়ালে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের টার্গেট। আপস্পট একাডেমীর সিপিএ মার্কেটিং কোর্সের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে যার সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজারের উপরে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয় এএসপি ওয়াহিদা বলেন,  ইনফর্ম এটিইউ অ্যাপে রাহিম মন্ডল এক ভুক্তভোগী প্রতারণার বিষয় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রাপ্তির পর এটিইউ তাৎক্ষনিক সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানায় প্রতারণা মামলা হয়। মামলার পরে আশুলিয়া থানার অধিযাচনপত্রের ভিত্তিতে এটিইউ নিজস্ব নজরদারী ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

আরএস