মেসির হাতেই বর্ষসেরার পুরস্কার

ক্রীড়া ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৭:১২ পিএম

কথায় আছে; সৃষ্টিকর্তা যখন দেয়, তখন সবকিছু ঢেলে দেয়। আর কিছু বাকি আছে কী মেসির? ফুটবলের ইতিহাসে কি জেতেননি তিনি! বহুবার কাঁদতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে নানা কটু কথা। তিনিই যে বিশ্বসেরা; এটাও অনেকেই মানতে নারাজ ছিলো; শুধু বিশ্বকাপ জেতেননি বলে।

তবে এখন তো তার ঝুলিতে বিশ্বকাপও আছে। ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় এসে যে এমন ভেলকি দেখাবেন মেসি; সেটাই বা কে জানতো। মেসির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়ে যে ফুটবলটাও তার সাপ মোচন করেছে। একটানা তিনটি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছেন মেসি। শুরুতে জিতলেন কোপা আমেরিকার ট্রফি। তারপর ইতালিকে হারিয়ে হাতে তুললেন ফিনালিসিমার ট্রফি।

এরপর কাতারে চুমু খেলেন বিশ্বকাপের ট্রফিতে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে পূরণ হয়েছে তার বিশ্বকাপ জয়ের পরম আকাঙ্খিত স্বপ্ন। তার চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে কাতারের মাটিতে আর্জেন্টিনা করেছে তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাস। ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে গোল্ডেন বল জেতা লিওনেল মেসি এবার হলেন দ্য বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার। সোমবার রাতে ফ্রান্সের প্যারিসে দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ২০২২ সালের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন মেসি।

গত ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ জেতার কারণে এই সম্মাননা অর্জনের সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তিনিই। মেসি পেছনে ফেলেছেন দুই ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে ও করিম বেনজেমাকে। বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস।

দ্বিতীয়বারের মতো দ্য বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার নির্বাচিত হলেন ৩৫ বছর বয়সী মেসি। এর আগে ২০১৯ সালে পুরস্কারটি জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে বিভিন্ন নামে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দিয়ে আসছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ২০০৯ সালে প্রথমবার এই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন পিএসজি ফরোয়ার্ড মেসি। তখন পুরস্কারটির নাম ছিল ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার। এরপর ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফিফা ও ফরাসি ম্যাগাজিন ফ্রান্স ফুটবল মিলে দেয় ফিফা ব্যালন ডি’অর।

সাবেক বার্সেলোনা তারকা পুরস্কারটি জেতেন চারবার (২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে)। আর ২০১৬ সাল থেকে চালু হয় দ্য বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার। গত মৌসুমে ক্লাব পর্যায়ে মেসির পারফরম্যান্স ছিল না নজরকাড়া। কিন্তু সবশেষ কাতার বিশ্বকাপে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে মাঠে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিরোপা খরার অবসান ঘটাতে গোল করে ও করিয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তারই। সাত গোল করে মেসি ছিলেন গোল্ডেন বুটের লড়াইয়েও।

পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেন তিনটি। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো তার হাতে ওঠে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষেই গোলের খাতা খুলেছিলেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি‍‍`অর জয়ী মেসি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছাড়া ফাইনালের আগ পর্যন্ত বাকি সবকটিতে একটি করে গোল করেন তিনি।

লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জেতা শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে তার পা থেকে এসেছিল জোড়া গোল। মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একটি করে অ্যাসিস্ট করেছিলেন মেসি। এছাড়া, আসরজুড়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে ধারাবাহিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি। সব মিলিয়ে গোলের সুযোগ বানিয়েছিলেন ২১টি।

বর্ষসেরা খেলোয়াড় বেছে নিতে ২০২১ সালের ৮ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হয়। ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ফিফার সদস্য দেশগুলোর জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচিত গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি ফুটবলপ্রেমীরা।

এআরএস