কাতার বিশ্বকাপের জন্য আসছে ভয়ঙ্কর কোকেন

মাদকের নিরাপদ রুট বাংলাদেশ!

খলিলুর রহমান প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২, ০১:২৬ এএম

দেশে দিন দিন নতুন মাদকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আইস, এলএসডি, ডিওবি, কোকেনসহ নানা ধরনের মাদকের সন্ধান পেয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, নতুন নতুন ভয়ঙ্কর কিছু মাদক সমুদ্রপথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে একটি চক্র। পরে ওইসব মাদক ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।

এমন একটির চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবচেয়ে মূল্যবান ও ভয়ঙ্কর অবৈধ মাদক ‘কোকেন’ বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কাতারে আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপে ওইসব মাদক পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই কাতারে পাঠানোর আগেই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও এক কোটি টাকা মূল্যের কোকেন জব্দ করা করেছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ শাখা।

এর আগে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা কোকেনের একটি চালান বাংলাদেশে ধরা পড়েছিল। ওই সময় জেইম বার্গলে গোমেজ নামে পেরুর এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এরও আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি অভিজাত হোটেল থেকে পেরুর আরেক নাগরিক জাগাজিতা এল বারাতো হুয়ান পাবলো রাফায়েলকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসময় তার লাগেজ থেকে তিন কেজি কোকেন উদ্ধার করা হয়েছিল।

সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক চোরাচালনচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো মিন্টু কর্মকর্তার (৩৪), এজাহার মিয়া (৩৮), মো. নাজিম উদ্দীন ওরফে মুন্না (৪০), মো. নাজিম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ মামুন (২৭)। তবে ওই চক্রের আরেক সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর গেন্ডারিয়াস্থ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল জানান, আসামিরা সমুদ্রপথে কোটি টাকার কোকেন বাংলাদেশে নিয়ে আসছে— এমন সংবাদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে আসে।

পরে ক্রেতা সেজে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওই চক্রের সন্ধানে কাজ শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারের বেপারীপাড়া রোড থেকে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ২৫০ গ্রাম কোকেন, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। ২৫০ গ্রাম কোকেনের দাম এক কোটি টাকা বলেও জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কক্সবাজারে গাড়িচালক পলাতক আসামি জাহাঙ্গীর আলম গভীর সমুদ্রের একটি ট্রলার থেকে ওই মাদক সংগ্রহ করেন। ভয়ঙ্কর মাদক কোকেনগুলো মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন তারা। এ লক্ষ্যে তারা বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতদের নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন।

ওই চক্রের সদস্যরা ইতিপূর্বে ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু অতিলোভের বশে অতিমূল্যের এই মাদক চোরাচালানের সাথে যুক্ত হয়েছেন তারা। তবে তার কাছ থেকে আরও তথ্য উদ্ধারের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ আমার সংবাদকে বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ব্যবহূত বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের উৎস অনুসন্ধানে তৎপর ছিলাম আমরা।

ইতিপূর্বে এলএসডি-আইসসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত মাসে একটি কোকেন পাচারকারীচক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে ক্রেতা সেজে চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই মাদক পাচারচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশে কোকেনের বাজার নেই। এক কেজি বিশুদ্ধ কোকেনের দাম ৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তাই বাংলাদেশে মাদক হিসেবে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। মূলত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই মাদক পাচার করা হয়। কলম্বিয়া, বলিভিয়া, পেরুসহ দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ কোকেন উৎপাদন করে।

কিন্তু এসব দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি কিংবা পণ্য ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে গেলে বিমানবন্দরে ওই ব্যক্তিকে এবং তার সঙ্গে থাকা পণ্যে মাদক আছে কি না— তা নিবিড়ভাবে তল্লাশি ও পরীক্ষা করা হয়। এ কারণে সন্দেহের বাইরে থাকতে মাদকচক্রগুলো প্রথমে চালান বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে পাঠায়। এরপর সেখান থেকে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা আমার সংবাদকে বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ও ভয়ঙ্কর মাদকের নাম কোকেন। এ মাদকের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে; এরপরই আছে ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা। ১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক আইনে কোকেন সেবন অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

তিনি আরও জানান, কোকেন সাধারণত পাইপের সাহায্যে নাক দিয়ে টেনে নেয়া হয়, পাত্রে রেখে তাপ দিয়ে বাষ্প গ্রহণ করা হয় অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নেয়া হয়। কোকেন সেবনে খিঁচুনি, হূদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক, যৌনক্ষমতা কমে যাওয়া, ফুসফুসের ক্ষতি, এইচআইভি, অন্ত্রের ক্ষয়, নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো রোগ হয় বলেও জানান তিনি।