এলসি কমেছে ৪৯ শতাংশ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৩, ১১:১৯ এএম
  • আমদানিতে কড়াকড়ি
  • ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছে এপ্রিলে

দেশে চলমান ডলার সংকট, অব্যাহত বাণিজ্য ঘাটতি ও রিজার্ভের ধারবাহিক অবনমনের প্রেক্ষাপটে আমদানি এলসি  বা ইম্পোর্ট লেটার অব ক্রেডিট খুলতে কড়াকড়ি আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে গত কয়েক মাস ধরে এলসি ওপেনিং কমছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এপ্রিলে আগের ৩২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া গত কয়েকমাসে এলসি খোলা কমে যাওয়ায় এপ্রিলে গত ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এপ্রিলে মাত্র ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়নের আমদানি এলসি খোলা হয়। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৪৯ শতাংশ কম। এরচেয়ে কম এলসি খোলা হয়েছিল ২০২০ সালের আগস্টে। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে তখন কিছুটা স্থবিরতা থাকায় ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়নের এলসি খোলা হয় সেসময়। এ ছাড়া গত এপ্রিলে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট বা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। এর চেয়ে কম পেমেন্ট হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সে মাসে ৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি পেমেন্ট হয়।

এলসি কম খোলার কারণ জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এপ্রিলে ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকের কার্যদিবস অন্য মাসের তুলনায় কম ছিল। গত মাসে এলসি ওপেনিং কম হওয়ার এটি একটি কারণ। এ ছাড়া বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের সংকট আছে, তাই ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক। এসব কারণেই এলসি খোলা কমেছে। আমদানিকারকরা বলছেন, এলসি মার্জিনসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শর্ত মানা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলছে না। ফলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ৫৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়নের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ কম। সেইসঙ্গে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এলসি সেটেলমেন্ট হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়ালের আমদানি কম হলে দেশের উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি পরিবহন, বিপনন থেকে শুরু করে কনজিউমার লেভেল পর্যন্ত প্রভাব তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব কারণে পণ্যের সাপ্লাই কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিলে ৫৭ শতাংশ কমেছে টেক্সটাইল ও লেদার মেশিনারিজের মতো ক্যাপিটাল মেশিনারিজের এলসি খোলার পরিমাণ। 

এ ছাড়া কম্পিউটার বা মোটরসাইকেলের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারির এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিক ও কেমিক্যালের মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়ালের এলসি খোলা কমেছে ৩২ শতাংশ। সিমেন্ট, স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো ইন্ডারমিডিয়েট পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৩১ শতাংশ, চাল ও গমের মতো ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা কমেছে ১৮ শতাংশ।