- তফসিলের জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় নিতে পারবে ইসি
দ্বাদশ নির্বাচনি তফসিলের দিনক্ষণ নির্ধারণে এখনও কোনো বৈঠক হয়নি— জানালেন ইসি সচিব
মো. জাহাংগীর আলম
- আগামীকাল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিদ্ধান্ত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধী দলগুলো সরকার হটানোর এক দফা দাবি আদায়ে টানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে অবস্থান করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলগুলোকে মোকাবিলায় রাজপথে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাজপথ পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। মূলত নির্বাচন কার অধীনে হবে, দলীয় সরকার, নাকি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে— তা নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
এই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয় বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনও আন্তরিকভাবে চাচ্ছে, দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হোক। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না বলেও মনে করছে ইসি। আর সে কারণে ইসি চাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই রাজনৈতিক বিরোধ রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হোক, সব দল ভোটে অংশ নিক। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধ না মিটলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইসিকে ভোটের আয়োজন করতে হবে। সে কারণে সংস্থাটিকে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কমিশন চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার পর ভোট অনুষ্ঠানে ৬৫ দিন হাতে রাখতে। সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি চলছে। তবে কবে তফসিল ঘোষণা হবে— সে ধরনের কোনো দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। দিনক্ষণ ঠিক করতে ইসি এখনো কোনো সভাই করেনি।
রেওয়াজ অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অন্যান্য কমিশনার বঙ্গভবনে যাবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। এরপর কমিশন ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে। তবে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেদিন তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট চলছে, কিন্তু এই সংকট নিরসনে ইসির কোনো ম্যান্ডেট নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকট সমাধান করে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। ইসির সামনে-পেছনে বা পাশে খুব বেশি স্পেস নেই। সংবিধানে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। সে কারণে পরিবেশ যেমনই থাক না কেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করতেই হবে। কমিশনের কাছে এর বিকল্প কিছুই নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিইসির এই বক্তব্যে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। একটি হচ্ছে কমিশন অনুভব করতে পেরেছে বর্তমানে সত্যিকারার্থে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই। আরেকটি হচ্ছে, পরিবেশ যা-ই থাকুক, নির্বাচন সংবিধানে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই হতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সঙ্গে গতকাল কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। প্রকৃতপক্ষে ঠিক কবে ভোট হবে এবং তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তফসিল ঘোষণা কবে হবে, তার দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে এখনো কোনো বৈঠক হয়নি। ফলে কোনো তারিখও নির্ধারণ হয়নি। তিনি জানান, ৯ নভেম্বর (কাল) বঙ্গভবনে যাবেন নির্বাচন কমিশনাররা। তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে দিনক্ষণ ঠিক করবেন। তার আগে বলা যাবে না ভোট কবে হবে বা তফসিল ঘোষণা কবে হচ্ছে।
এদিকে, সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তফসিল থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত ৬৫ দিন হাতে রাখতে চাইলে তফসিল ঘোষণা করতে ইসি আরও দুই সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে পারবে। অর্থাৎ ইসি চাইলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ইসির হাতে আরও দুই সপ্তাহ সময় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। সেখানে দেখা যায়, দেশে বর্তমান মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। ইসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৮৫২ জন। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।