কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই চট্টগ্রামে

আজ চট্টগ্রাম আসছেন ড. ইউনূস

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

‘অ্যারার ফোয়া ইউনুস ফইলল্যা আইয়্যের। সরকারের প্রধান। অ্যারার ইউনূস শান্তির নোবেল পুরস্কার ফাইয়্যে। অ্যারার ইউনূসের সারা দুনিয়ায় চিনে সম্মান গ্যরে’— এভাবেই কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী এলাকার সবজি বিক্রেতা সৈয়দ আলম শাহলম (৬৪)। তিনি আবেগাপ্লুত। তার চোখের কোণায় অশ্রু। তবে গড়িয়ে পড়া অশ্রু সুখ ও শান্তির।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হওয়ার পর এই প্রথম চট্টগ্রামে আসছেন। তার আগমনে চট্টগ্রামজুড়ে উৎসাহ-উচ্ছ্বাস সর্বত্র। শুধুমাত্র আজকের অপেক্ষায় আছেন। তাকে বরণ করতে সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার আগমনে সবচেয়ে খুশি নিজ গ্রামের মানুষ। গ্রামের মধ্যে যেন ঈদ উৎসবকে হার মানাবে। 

হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ বি এম মশিউজ্জামান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘স্যার আসতে পারেন নিজ গ্রামে। সব ধরনের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এখানকার মানুষ স্যারের জন্য পাগল। গ্রামের মানুষের সাথে বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামের মানুষের চোখে ঘুম নেই। কখন তাদের সন্তান সরকারপ্রধান গ্রামে আসবেন। গ্রামের মানুষের মুখের হাসি-আনন্দ দেখে আমরাও উচ্ছ্বসিত। গ্রামের প্রতিটি মানুষের কথা স্যার খুব সহজ সরল সাদা মনের মানুষ। গ্রামে কখনো ধনী-গরিব বা কোনো পার্থক্য করেন নাই। দোয়া করেন স্যারকে যেন সর্বোচ্চ সম্মান দিতে পারি।’ 

প্রায় দেড় যুগ পর নিজ গ্রাম হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে আসতেছেন। নিকট আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করবেন। তবে প্রায় ৬০ বছর ধরে শহরের পাঁচলাইশ থানার নিরিবিলি নামক একটি ভবনে বসবাস করে আসছেন। 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাথুয়া গ্রামের হাজি এম নজু মিয়া সওদাগর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে সভায় যোগদান করবেন। 

চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র সচিব ওমর ফারুক দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, স্যার চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ মিনিট থাকবেন। মতবিনিময় ও দিকনির্দেশনামূলক কথা বলবেন বন্দর সংশ্লিষ্টদের সাথে। এরপর কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। যে সেতুটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাণের দাবি। 

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ফলকে স্যারের নাম না লিখার নির্দেশনা এসেছে। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার আগমনে সবচেয়ে বেশি সজ্জিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দারিদ্যবিমোচন ও বিশ্ব শান্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করবেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক সময়ের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক  ছিলেন। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ। 

জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিটেকটিভ ব্রান্স, যৌথবাহিনী, সিআইডি, এনএসআই, ডিএসবি, এসবি, ডিজিএফআই ও এএসএফের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় মাঠে থাকবেন। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে নগর পুলিশ ও জেলা পুলিশ। নাশকতা এড়াতে শহরের প্রবেশ মুখে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ৫ম সমাবর্তনে ৪২ জন পিএইচডি, এবং ৩৩ জন এমফিল ডিগ্রিসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কলা ও মানববিদ্যা চার হাজার ৯৮৮ জন, বিজ্ঞান দুই হাজার ৭৬৬ জন, ব্যবসায় প্রশাসন চার হাজার ৫৬৩ জন, সমাজ বিজ্ঞান চার হাজার ১৫৮ জন, জীববিদ্যা এক হাজার ৬৮৫ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৯৬ জন, আইন ৭০৩ জন, শিক্ষা ৩১৭ জন, মেরিন সায়েন্স ২৮৪ জন, চিকিৎসা দুই হাজার ২৯৬ জন বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন গ্র্যাজুয়েটদের ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি ১ নম্বর মূল গেট (হাটহাজারী রোড) থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।

ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার জন্য ১ নম্বর গেট থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। গ্র্যাজুয়েটদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট যথা- ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, জমিয়াতুল ফালাহ, পলিটেকনিক মোড় (ফ্লাইওভার থেকে নেমে) থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করবে এবং ক্যাম্পাস থেকে ফিরতি বাসগুলো বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলবে।

বটতলী স্টেশন থেকে ৭টা ৫ মিনিট ও ৭টা ৪০ মিনিট, ষোলশহর স্টেশন থেকে সাড়ে ৯টা, ১০টা ৫ মিনিট, সাড়ে ১১টা এবং ফিরতি ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে ৪টা ৪০ মিনিট, ৬টা ২০মিনিট এবং ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়া আইডি কার্ড ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।

নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানান, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি এবং প্রশাসনের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার মতামত অনুযায়ী সমাবর্তীদের কাছে ফোন যাচ্ছে। কনভোকেশন কার্ড পেলে সে স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন, যদি না পুলিশ বা সংস্থা থেকে কাউকে বিশেষভাবে নিষেধ করা না হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অংশ নেবেন। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সাদা পোশাকে কাজ করছে।