প্রস্তুত হলেও অপারেটরের অভাবে চালু হচ্ছে না হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন নতুন থার্ড টার্মিনাল গড়ে তুলতে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। যদিও জাপানের একটি কনসোর্টিয়ামকে থার্ড টার্মিনালের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, জুনের মধ্যে ওই কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। আর চুক্তি হলেও টার্মিনালটি চালু করতে আরও অন্তত ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে। আর যদি চুক্তি করতে দেরি হয় তাহলে আরও পিছিয়ে যেতে পারে টার্মিনাল চালুর সময়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৃষ্টিনন্দন নতুন টার্মিনাল ভবন (থার্ড টার্মিনাল) গড়ে তুলতে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে লিফট, এস্কেলেটর, চেক-ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন কাউন্টার, লাগেজ বেল্টসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম। ভবনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বোর্ডিং ব্রিজ। ট্যাক্সিওয়ে, কার্গো টার্মিনাল, এয়ারক্র্যাফট পার্কিং বে, কার পার্কিং বিল্ডিংও প্রস্তুত। তবে ভিআইপি এলাকায় কেবল সামান্য কিছু কাজ বাকি। তাছাড়া এখনো বসেনি কাস্টমসের কয়েকটি মেশিনও। ওই দুই অনুষঙ্গ বাদে পুরো প্রস্তুত থার্ড টার্মিনাল। কিন্তুবাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অপারেটরের অভাবে তা চালু করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। পরের বছরের ডিসেম্বরে জাপানি কোম্পানি মিৎসুবিশি, স্যামসাং ও ফুজিতার সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে এবং ২০২৩ সালের জুনে টার্মিনালের স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়। একই বছরের অক্টোবরে তৎকালীন সরকার টার্মিনালটি সফট ওপেনিং করে। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি নাগাদ প্রস্তুত হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও সেটি বেবিচকের কাছে হস্তান্তরের জন্য তাগাদা দিচ্ছে। থার্ড টার্মিনালে বর্তমানে ভিভিআইপি ও ভিআইপি অংশে টাইলস ও সিলিংয়ের কিছু কাজ চলছে, যেটা যেকোনো মুহূর্তে শেষ করে ফেলা সম্ভব। আর বেবিচক থেকে থার্ড টার্মিনালে যতো মেশিন স্থাপনের কথা ছিল, তার সবগুলোই সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব পদ্ধতিতে থার্ড টার্মিনাল পরিচালনা করা হবে। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশের পিপিপি কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তার আওতায় অপারেটর হিসেবে নিয়োগের জন্য একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা করছে। জাপানি কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে থাকবে দেশটির বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশন। চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একই কনসোর্টিয়ামের অংশীদার জাপানের মিনিস্ট্রি অব ল্যান্ড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। আশা করা হচ্ছে জুনের মধ্যে আলোচনা সম্পন্ন করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা যাবে। আর এ বছরের শেষ নাগাদ থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে আসতে পারবে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার জন্য চার শিফটে প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন হবে। ওই জনবলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। ফলে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পর জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষিত করা হবে। তারপর শুরু হবে ট্রায়াল। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করা হবে। চুক্তি সম্পন্নের পর ওসব কাজ শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লেগে যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, ‘টার্মিনালের ভেতরে সিভিল এভিয়েশন থেকে যেসব মেশিন বসানোর কথা, তার সবই বসানো হয়ে গেছে। মেশিনগুলো প্রতিদিন চালানো হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে টার্মিনাল ভবনটি রেডি টু অপারেট অবস্থায় আছে। তবে শতভাগ প্রস্তুত সেটা বলা ঠিক হবে না। কারণ ভিভিআইপি, ভিআইপি অংশের কাজ এখনো চলমান। যদিও ভেতরের অন্যান্য জায়গার কাজ শেষ হয়েছে। আর টার্মিনালের সঙ্গে তো অনেক অর্গানাইজেশন জড়িত। কাস্টমও জড়িত। কাস্টমসের ১৬টা মেশিন বসানোর কথা, সেগুলো তারা এখনো প্রসেস করে আনতে পারেনি। সেগুলো না হলে কাজটা কমপ্লিট বলা যাবে না।
অন্যদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল চালু করার কথা জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা হচ্ছে এটা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা। সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টার্মিনালটি যারা অপারেট করবে, তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েক দফা মিটিং করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে অপারেশন সম্পর্কিত চুক্তির প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। অবকাঠামোগতভাবে থার্ড টার্মিনালে খুবই সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। একই সঙ্গে অপারেশনের প্রস্তুতিও চলমান রয়েছে। জাপানিজদের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে একটা অপারেশন চুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা এখন ডিসকাশন বা নেগোসিয়েশন লেভেলে আছে। অপারেটর নিয়োগ হয়ে গেলেই অপারেশন রেডিনেস টেস্ট হবে, তারপর ফাংশনে যাবে থার্ড টার্মিনাল।