যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করায় নেতানিয়াহুর ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প

ইরানজুড়ে বিজয় উৎসব

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইরানজুড়ে পালিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরপরই ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস। তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছে হাজার হাজার মানুষ। স্লোগানে মুখরিত হয়েছে রাজধানী, আগুন জ্বালিয়ে উদযাপন করা হয়েছে ‘জয়’।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ইরানের শীর্ষ নেতারা একে ‘ঐতিহাসিক জয়’ হিসেবে আখ্যা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিজয় র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ইরানের সহরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে ইরান শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রমাণ করেছে- আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তির শিং ভেঙে দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। এটাই ইরানের প্রকৃত শক্তির বহিঃপ্রকাশ। 

এদিকে ইরানের সংসদের স্পিকার ও প্রাক্তন আইআরজিসি (ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড) কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি একে একটি যুগান্তকারী বিজয় বলে মন্তব্য করেন। এক্স-এ দেয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। পারমাণবিক ইস্যুতে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে, পারমাণবিক শক্তি অধিদপ্তরের মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জাতীয় টেলিভিশনে বলেন, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেউ উপড়ে ফেলতে পারবে না। আমাদের সক্ষমতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির কারণে এই খাত আর কখনও থেমে থাকবে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি ইরানের জন্য কৌশলগতভাবে একটি সফলতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ এতে সরাসরি সংঘাত থেকে সরে এসে ইরান একটি ‘শক্ত অবস্থান’ নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ পেয়েছে। পাশাপাশি নিজ দেশের জনগণের কাছে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও কূটনৈতিক দক্ষতা তুলে ধরার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

ইরানের শহরগুলোতে বিজয় উদযাপনে মুখর জনগণ। রাস্তায় নেমে তারা ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরাইল ধ্বংস হোক’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর হয়। বহু জায়গায় দেখা গেছে পতাকা মিছিল, ধর্মীয় সংগীত ও বিপ্লবী স্লোগান। তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরাইল বৈরিতা বহু দশকের, ফলে এই যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিশ্চিত নয়। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। জবাবে ইরানও পালটা হামলা চালায় ইসরাইলে। সংঘাত চরমে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সমন্বয় করে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। শেষ পর্যন্ত, এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা উভয় দেশ মেনে নিতে সম্মত হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে আপাতত এই সংঘাতের অবসান ঘটে। ইরান বলছে, এই যুদ্ধবিরতি শুধুই সাময়িক বিরতি নয়, বরং এটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে- তারা ভয় পায় না, বরং প্রতিরোধ করতে জানে। তেহরান মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তারা এখন আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে।

যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করায় নেতানিয়াহুর ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প : ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ‘অত্যন্ত বিরক্ত’। সম্ভবত তিনি মনে করছেন, নেতানিয়াহু ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল লাভেল এ কথা বলেছেন। ইউরোপে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতির শর্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করায় তিনি ইসরাইল ও ইরান— দুই পক্ষের প্রতিই ক্ষুব্ধ।

আল-জাজিরার প্রতিনিধি লাভেল বলেন, ট্রাম্প ইসরাইল ও ইরান— উভয়ের ওপরই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে তার অতিরিক্ত রাগটা যে ইসরাইলের দিকে ছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প স্পষ্টতই বেশ বিরক্ত এবং সম্ভবত নেতানিয়াহু বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন, এমন বোধ করছেন।’ যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর সমর্থন পেতে ট্রাম্প সোমবার তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর ইরানের সমর্থন পেতে কাতারের সহযোগিতা নেন তিনি।