খরচ চালাতে সরকার ব্যাংক থেকে নিচ্ছে বাড়তি অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

খরচ চালাতে সরকার ব্যাংক থেকে নিচ্ছে বাড়তি অর্থ। মূলত সরকারের ঠিকমতো আয় না বাড়ায় এবং সঞ্চয়পত্র ও বৈদেশিক উৎস থেকে পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের ২১ মে পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারি নিট ঋণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। যা বছরের শুরুতে অনেক কম ছিল। গত জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে এই ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। 

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারের ঋণ লক্ষ্য প্রাক্কলিত মূল বাজেটের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যেখানে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেখানে সংশোধিত বাজেটে তা ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের ঋণ সীমিত রাখতে চলতি অর্থবছরের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হবে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২১ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২১ কোটি টাকা। এ সময় পুরোনো দেনা পরিশোধ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। তাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত জুন শেষে ছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। 

বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমাতে এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তার আগের দায় শোধ করছে। ফলে টানাপড়েনে থাকা ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এই সময়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। যদিও অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা।তখন বিল পরিশোধের জন্য তৎপরতা বাড়ে। তবে বর্তমান সরকারের ঋণ এখন পর্যন্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম।

সূত্র আরও জানায়, সরকার বর্তমানে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছে। তবে অনেক বেড়েছে আগের বকেয়া ঋণ এবং সুদ পরিশোধের পরিমাণ। তাছাড়া প্রতি বছর বাড়ছে সরকারের চলতি ব্যয়, যেমন বেতন-ভাতা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। আবার সঞ্চয়পত্রের ঋণ কমে যাওয়ায় সরকারের ঋণ পরিমাণ আরও বেড়েছে। 

চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আর আগামী অর্থবছরে এটি ৬ শতাংশের নিচে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গত এপ্রিল শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যায়, যার প্রভাব সঞ্চয়পত্রের বিক্রি এবং ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধিতে পড়ছে। গত বছর ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।