চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস চার্জের ভাগ চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মূলত নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই চসিক চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চাইছে। আর এ দাবি অতীতেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একাধিক মেয়র করেছেন। কিন্তু কেউই সার্ভিস চার্জের নামে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অর্থ আদায় করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষেল মতে, বিদ্যমান আইনের সংশোধন করা না হলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া কঠিন। চসিক এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম শহরের বড় একটি অংশজুড়েই বন্দর ও বন্দরসংক্রান্ত বিভিন্ন স্থাপনার অবস্থান। বন্দরের কাজে ব্যবহূত দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন ওই নগরীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে। ফলে মহানগরীর সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাতে সংস্কারে সিটি কর্পোরেশনের বাড়তি ব্যয় হয়। তাছাড়া সেবা খাতে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বেশি গুরুত্ব পায় চট্টগ্রাম বন্দর। ওসব সেবা অব্যাহত রাখতে সিটি কর্পোরেশন বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দাবি করেছে।
সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। তাছাড়া কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। বন্দরের পণ্যভর্তি কনটেইনারের বেশিরভাগই সড়কপথে পরিবহন হয়েছে।
চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক ৬-১০ টন বোঝার গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০-৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক-লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি থেকে প্রতিনিয়ত ভিআইপি বিমানবন্দর সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো ওই কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা-কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যাতে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। ওসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, যা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, চসিকের বর্তমান মেয়র দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের বাৎসরিক আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চেয়ে অতিসম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। এর ফলে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
তাছাড়াও চট্টগ্রামে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফলে এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সড়ক-মহাসড়কগুলো সচল রাখা ও এর সার্বক্ষণিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রধান সড়ক, কালভার্ট ও টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যা বন্দরের সুষ্ঠু কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জনগণের চলাচলের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নসহ চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ চেয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটা সিটি করপোরেশনের পাওনা। বন্দরেরই উচিত এ টাকাটা সিটি কর্পোরেশনকে দিয়ে দেয়া।
এর আগে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গেও এ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বন্দরের বড় বড় গাড়িগুলো কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা দিয়ে চলছে। সিটি কর্পোরেশন সকল লজিস্টিক সাপোর্ট বন্দরকে দিচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করতেই সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ চলে যায়। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলেও তদবির করে ন্যায্য দাবি আদায় করা হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ‘বিগত সময়ে সার্ভিস চার্জ হিসেবে এক শতাংশ সিটি কর্পোরেশনের জন্য দাবি করা হয়েছিল।
কিন্তু বিদ্যমান আইন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা করা হচ্ছে। এ আইনে এর প্রভিশন না থাকার কারণে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেয়ার সুযোগ নেই।