চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ও এনামুলের কারিশমায় আমূল পরিবর্তন চট্টগ্রাম বন্দরের

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১০:০২ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরের অতীতের সব স্বঘোষিত নিয়ম সিন্ডিকেট ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। গত সাড়ে ১৫ বছর স্বঘোষিত নিয়ম ও সিন্ডিকেট চলতো চট্টগ্রাম বন্দরে। 

চেয়ারম্যান হিসেবে রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান নিয়োগ পাওয়ার পর দিনে দিনে বদলে যায় সবকিছু। চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেয়ে পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম এক বুক সাহস নিয়ে সততার সাথে আমূল পরিবর্তন এনেছেন পরিবহন বিভাগে। এতে দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী ঠিকাদাররা অতীতের মতো সুযোগ করতে না পেরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। 

পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম বলেন, আগে এই বন্দরে যে সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতো। অন্য সাধারণ ঠিকাদাররা এতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। ফলে ব্যাহত হতো উন্মুক্ত দরপত্র প্রতিযোগিতা। 

গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের প্রথম অফিস আদেশ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ করা। তার নিয়োগের পর ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হতে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের টেন্ডার কার্যক্রম। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের একান্ত সহযোগী হিসেবে পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতার সাথে একে একে ভেঙে দিতে থাকেন সব সিন্ডিকেট। শুরু হয় নতুনদের সুযোগ দেয়ার পালা। এতে সরকার এবং চট্টগ্রাম বন্দরের আর্থিক সাশ্রয় হতে থাকে। এর প্রথম উদাহরণ ছিল ‘সদরঘাট লাইটারেজ জেটি’ ভাড়া দেয়ার দরপত্র। এই উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সদরঘাট লাইটারেজ জেটি ভাড়া দেয়ার জন্য ইতোপূর্বে কেবলমাত্র আমদানিকারকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো। এতে তিন-চারজন আমদানিকারক একত্রিত হয়ে সিন্ডিকেট করে কম দামে এই জেটি ভাড়া নিতেন। 

চেয়ারম্যান এবং বর্তমান পরিচালক পরিবহনের নেতৃত্বে সম্প্রতি যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তাতে আমদানিকারক, রপ্তানি কারক, শিপিং এজেন্ট, অফ ডক অপারেটর সবার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। ফলে পূর্বে যেখানে মাত্র তিন বা চারজন দরপত্র অংশগ্রহণ করতেন এবার দরপত্রে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৯ জন। চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ও বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে।

 উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় সিন্ডিকেট ভাঙার দ্বিতীয় উদাহরণটি হলো ঢাকায় ‘কমলাপুর আইসিডি’-তে টেন্ডার আহ্বান। আগে কমলাপুর আইসিডিতে টেন্ডারে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হিসেবে কেবলমাত্র ‘ট্রেন থেকে কন্টেইনার লোডিং আনলোডিং’-এর অভিজ্ঞতা চাওয়া হতো। যার ফলে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেতো। বর্তমানে পরিচালক পরিবহন এবং চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই দরপত্রেও শিপিং এজেন্ট, অফডক অপারেটর, বার্থ-অপারেটর সবার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে মাত্র দু-একজন অংশগ্রহণ করতে পারতেন এবার সেখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। 

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। ইতোপূর্বে এই টার্মিনালটির জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হতো, তাতে কেবলমাত্র দু-একজন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করতে পারতেন। 

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান এবং পরিচালক পরিবহনের যৌথ উদ্যোগে গত ৭ জুলাই এই প্রথা ভেঙে দেয়া হয়। সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এই টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেয়া হয় বাংলাদেশের গর্ব ‘বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে’। 

বাংলাদেশ নৌবাহিনী এই পর্যন্ত আগের যে কোনো মাসের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের তুলনায় অধিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে। ?এই গতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক কনটেইনার হ্যান্ডলিং পরিচালিত হলে কেবলমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে আগের তুলনায় প্রায় দুই লাখ বেশি কনটেইনার handling  করতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের রেভিনিউ বাড়বে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। 

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং পরিচালক পরিবহন এনামুল করিম যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দরের সব ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে। যা সাধারণ দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে কিন্তু হতাশ করেছে আগের সরকারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের। ফলে তাদের একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান এবং পরিচালক পরিবহনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে বলেন, কোনো অপশক্তি আমাদের দমাতে পারবে না। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির একমাত্র প্রধান চালিকাশক্তি। এই চালিকাশক্তিকে কোনোমতেই দুর্বল করা যাবে না।