রাজধানীর উত্তরা-বিমানবন্দর এলাকায় দীর্ঘ যানজট

শ্যালোমেশিনে সরানো হয় সড়কের পানি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০৭:৩২ পিএম
শ্যালোমেশিনে সরানো হয় সড়কের পানি
  • যানচলাচল স্বাভাবিকে হিমশিমে ট্রাফিক পুলিশ
  • সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থমকে থাকে গণপরিবহন 
  • বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অফিসে যান বেশিরভাগ মানুষ  

একাধিক উন্নয়ন কাজে রাজধানীর উত্তরামুখি সড়কে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (২ অক্টোবর) ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি এসব খানা খন্দে জমে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ে, সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। 

বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমশিমে পড়ে ট্রাফিকের সদস্যরা। পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ। 

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিমানবন্দর এলাকায় যানচলাচল থমকে থাকায় কর্মজীবীরা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পথচলা শুরু করেন। পরে উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে সড়কের জমা পানি সরাতে রোববার (২ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় শ্যালো মেশিন বসানো হয় এবং বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। 

তবে বিমানবন্দর-উত্তরা-টঙ্গীর সড়কে বিআরটিএ’র কাজ চলায় এমন যানজট সারাবছরই লেগেই থাকে কিন্তু বৃষ্টি হলে যেন পালে হাওয়া লাগে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর-উত্তরামুখি, গুলশান লিংরোড থেকে প্রগতি স্বরণী হয়ে বিমানবন্দর-উত্তরামুখি এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সড়কে বিআরটিএ’র উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। ফলে সড়কের নানান জায়গায় খানা খন্দ রয়েছে।

রোববার (২ অক্টোবর) ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হলে এসব স্থানে পানি জমে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সড়কের পানি সরাতে শ্যালো মেশিন সংগ্রহ করে উত্তরা ট্রাফিক পুলিশ। 

পরে দুপুর ১২ টায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি সরানোর কাজ শুরু হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়কের উত্তরার অর্ধেক অংশ পানির নিচে চলে যায়। ফলে সড়কটিতে যানচলাচলের গতি কমে যায়। এর মধ্যে আবার সড়কের খানাখন্দ ও গর্তে পড়ার আশঙ্কায় যানবাহনগুলো পানির অংশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। 

এতে উত্তরা ছাড়িয়ে খিলক্ষেত, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও সাতরাস্তা, কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, নর্দ্দা, নতুন বাজার, বাড্ডা, লিংরোড, রামপুরা পর্যন্ত যানজট ছাড়িয়ে যায়। 

এসময় দীর্ঘ সময় আটকে থেকে উপায় না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটেন যাত্রীরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে কর্মমুখী মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনে হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশ।

চালক, যাত্রী এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজটের প্রধান কারণ উত্তরা এলাকায় বিআরটিএ’র প্রকল্প। প্রকল্পের কাজের জন্য সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। 

এসব গর্তে জমেছে পানি। এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গি বা গাজীপুরের দিকে যানবাহন দ্রুত গতিতে চলতে পারছে না। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এছাড়া সারা বছরই এ সড়কে দীর্ঘযানজট লেগেই থাকে।

আব্দুল্লাহপুরগামী আলিফ পরিবহনের যাত্রী সুমন জানান, শিয়া মসজিদ থেকে বনানী পর্যন্ত আসতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে। এরপর বনানীতেই গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এক ঘণ্টার বেশি। 

উত্তরায় অফিস হওয়ায় নেমে হেঁটে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টায় অফিস গেলেও রোববার প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগছে। এছাড়া বিমানবন্দর সড়কে এমন যানজট প্রায় সময়ই থাকে।

নতুনবাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত সোয়া ৩ ঘণ্টায় এসেছেন ভিক্টর পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, নর্দ্দা থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক আসতে স্বাভাবিক সময়ে লাগে পাঁচ বা সাত মিনিট, অথচ এখানে আসতে এক ঘণ্টা লাগছে। ফলে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন। অন্যান্য সময় এত জ্যাম থাকে না। রোববারের জ্যাম বলার মতো নয়। বিমানবন্দর যেতে কতক্ষণ লাগে তা বলা যাচ্ছে না।

খিলক্ষেতে কয়েকজন পথচারী প্রতিবেদককে বলেন, উত্তরা থেকে বাসে উঠার পর থেকেই বসে ছিলাম। পরে কোন উপায় না পায়ে হেঁটে এ পর্যন্ত আসছি। এদের কারো অফিস বনানী, কারোটা মহাখালি। বাস যেখানে ছিল সেখানেই থেমে আছে। তাই বাধ্য হয়েই পায়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছেন তারা।

উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান বলেন, জমা পানি সেঁচার জন্য মোটর বসিয়ে উত্তরার সড়কের পানি সরানো হয়েছে। এখন যান চলাচল শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল আমার সংবাদকে বলেন, বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দর সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। যানচলাচলে বিঘ্নতা ঘটে। একদিকে কর্মমুখি মানুষের চাপ অন্যদিকে সড়কে পানি। 

ফলে যানচলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। অথচ পানি সরানোর কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেঁচ মেশিন বসিয়ে পানি সরানোর ব্যবস্থা করি। পরে বিকেল সাড়ে ৩টায় যানচলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে। 

টিএইচ