হাসপাতালের চেম্বারে নারীর সঙ্গে চিকিৎসকের অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩, ১০:১৯ এএম
হাসপাতালের চেম্বারে নারীর সঙ্গে চিকিৎসকের অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস

রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ওই কর্মকর্তার সাথে এক নারীর অন্তরঙ্গ ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ওই কর্মকর্তা নিজ অফিস কক্ষে নারীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম ডা. দেবাশীষ ঘোষ। তিনি উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার বর্তমানে একই ডিপার্টমেন্টের মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছরে দেবাশীষের বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, রোগীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা আদায়, ভুয়া বিল ভাউচার, নারীর সংক্রান্ত নানা ধরনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও দায়িদ্বে বহাল রয়েছে এ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত মার্চ মাসে উত্তরার বাসিন্দা মিজানুর রহমান নামে এক রোগীর কাছ থেকে টাইটেনিয়াম প্লেটের দাম দ্বিগুণের বেশি রাখেন দেবাশীষ। এপ্রিল মাসে ঝন্টু কুমার দাসের কাছ থেকে হাতের অপারেশন প্লেটের দাম তিনগুণ ও ফারজানা চৌধুরীর কাছ থেকে হাড় জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত প্লেট/পাতের অতিরিক্ত দাম নেন এবং মে মাসে একই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী ফারজানা আক্তার শান্তার কাছ থেকে হাড় জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত প্লেট/পাতের অতিরিক্ত প্রায় পাঁচ গুণ দাম নেন দেবাশীষ। এ বিষয় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএমএসআরআই।

তদন্তে কমিটি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতাও পায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেবাশীষ ঘোষ উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরীরত থেকে একই হাসপাতালে অর্থপেডিক আপ্লায়েন্সের ব্যবসা করে এবং তা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়। গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে। তদন্ত পর্ষদ অর্থপেডিক এপ্লায়েন্সের এর বিক্রয়মূল্য এর ক্রয়মূল্যের চেয়ে তিনগুনেরও বেশি রেখে অতিরিক্ত মুনাফা করে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এতে তার বিরুদ্ধে বিএমএসআরআই এর বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ প্রদান করে। 

অন্যদিকে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন দেবাশীষ ঘোষ তপুর আপত্তিকর ভিডিওর সন্ধান পায় কর্তৃপক্ষ। ওই ভিডিওটি তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার বিবরণ, জবানবন্দী, ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষ্য প্রমাণে ডা. দেবাশীষ ঘোষ তপুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ২৮ মার্চ রমজান মাসে অর্থোপেডিক্স বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষের কক্ষে একজন নারী প্রবেশ করেন। দেবাশীষ জানান, ওই নারী তার পূর্ব পরিচিত, একসাথে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেছিলেন এবং ওই দিন ইফতারি করতে তার কক্ষে এসেছিলেন। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে নারীর সঙ্গে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে ডা. দেবাশীষকে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায়।

এছাড়া ২০১৯ সালে দেবাশীষ ঘোষের বিরুদ্ধে একজন নারী রোগী উত্তরা পশ্চিম থানার শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয় হাসপাতালে সাবেক পরিচালক ডা. খাদেমুল ইনসান একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলেন। এছাড়া দেবাশীষের বিরুদ্ধে তার নারী সহকর্মীদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল মেসেজ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। 

গত ২৫ জুন তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন বক্তব্য ও তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অর্থোপেডিক্স বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ ঘোষ অনৈতিক কার্যকলাপের লিপ্ত ছিল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো জায়গায় এই ধরনের ঘটনা পুরোপুরি লজ্জাজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

অভিযোগকারী মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দেবাশীষ ঘোষ তপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকারী সংরক্ষণ অধিদপ্তর কারওয়ান বাজারে অফিসে অভিযোগ করেছি। ২০ নভেম্বর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে শুনানির জন্য ডেকেছিল। তারা স্পষ্ট কোন উত্তর দিতে পারেনি। এছাড়া একই হাসপাতালে কর্মরত এক নারী জানান, আমরা একই সাথে কাজ করি, একসাথে থাকি, কিন্তু আমরাই আমাদের স্যারের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছি। অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু কোন লাভ হয়নি। যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সে দেবাশীষ ঘোষ তপুকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার থেকে একই ডিপার্টমেন্টের মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তা এই হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক মেনে নিতে পারছে না। 

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিডি. জেনা. (অব) ডা. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এ বিষয় তদন্ত চলমান, অভিযোগটি ইসি কমিটিতে উঠলেই কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া ডা. দেবাশীষ ঘোষ তপুকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রুহুল আমিন নামে এক মেডিকেল অফিসারকেও এক নারীর মৌখিক অভিযোগে চাকরীচ্যুত করে প্রতিষ্ঠানটি।

আরএস