কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে কলম বিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে কলম বিরতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ, কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ এবং সম্প্রতি জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আবারও কলম বিরতি ও আন্দোলনে নেমেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সোমবার সকালে এনবিআর ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। অনেকে কাফনের কাপড় পরে প্রতীকী প্রতিবাদে যোগ দেন।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ‘গোলামী আইন বাতিল কর’, ‘বদলির নামে জুলুমবাজি বন্ধ কর’, ‘চেয়ারম্যানকে অপসারণ কর’— এমন নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড তারা বহন করেন।

এর আগে, গত ২১ জুন শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এতে জানানো হয়, সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালিত হবে।

এদিকে, আন্দোলন চলাকালে এনবিআরের আয়কর বিভাগে উপকর কমিশনার পর্যায়ে পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তারা দাবি করেছেন, আন্দোলন দমন করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বদলির ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধও লঙ্ঘন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে এনবিআরকে দুটি আলাদা ইউনিটে ভাগ করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর বিরোধিতা করে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা ২৬ মে পর্যন্ত কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর অর্থমন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হচ্ছে না বরং এটি একটি ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই ঘোষণার পর আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

তবে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তখন থেকেই বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং তাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে।

গত ২০ জুন রাজস্ব সংস্কার কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে। তবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি এই কমিটিতে রাখা হয়নি, এমনকি কোনো আলোচনা করাও হয়নি।

সংগঠনের নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাঝেও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে। রাজস্ব ভবন ও আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন একপ্রকার উস্কানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সংগঠনের সভাপতি অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব মিজ সেহেলা সিদ্দিকা জানান, এনবিআর চেয়ারম্যান সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি থাকলে কোনো রাজস্ব সংস্কারই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

তারা আরও বলেন, পলাতক আওয়ামী সরকারের তালিকাভুক্ত ৪৪ জন আমলার মধ্যে এই চেয়ারম্যান রয়েছেন তিন নম্বরে। ইতোমধ্যে ওই তালিকার ছয়জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ফলে এনবিআরের চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতেই তিনি এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছেন।

ইএইচ